কুমিল্লা -৩ (মুরাদনগর) আসনে নিজ নিজ এলাকায় ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণসহ নানা প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর আলম সরকার। একই আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন এমপি নির্বাচনী আচরণবিধির অভিযোগের বুঝা মাথায় নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের অনুষ্ঠানে নগদ অর্থ প্রদানসহ দান অনুদান নিয়ে। যার ফলে অনেক উত্তাপ নিয়ে জমে উঠেছে ওই এলাকার ভোটের মাঠ। এদিকে নৌকার সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা ও হুমকির অভিযোগও রয়েছে অব্যাহত।

গতকাল রোববার সকাল থেকে কুমিল্লা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সরকার উপজেলার বাখরনগর, রহিমপুর, যাত্রাপুর, মোচাগাড়া, থোল্লা, পৈয়াপাথর ও গুঞ্জর এলাকায় গণসংযোগ চালান। এ সময় তিনি তার সমর্থকদের ওপর হামলা ও ভোটারদের মাঝে নগদ টাকা বিতরন করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে কুমিল্লার মুরাদনগরে যেয়ে জানাযায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনে নৌকা প্রার্থী ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে নগদ টাকার বিতরণের অভিযোগ। টাকা বিতরণের একাধিক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় সোরগোল পড়ে গেছে। এ আসনে নৌকার প্রার্থী এফবিসিসিআইয়ের সাবেক দু’বারের সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন প্রকাশ্যে মাইকে ঘোষনা করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নগদ লাখ লাখ টাকা অনুদান দেয়াসহ ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণ ও শীতবস্ত্র বিতরন করে তার ভিডিও ও ছবি নিজের ফেসবুক এ্যকাউন্টে প্রচার অব্যাহত রেখেছেন প্রার্থী নিজেই।

এসব অভিযোগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় (৩০ ডিসেম্বর) একই দিনে একই আসনের নৌকার সংসদ সদস্য প্রার্থী ইউসুফ হারুনকে আবারো ও তার আরেক সমর্থক এক ইউপি চেয়ারম্যানকেসহ শোকজ করেছেন কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ কানিজ তানিয়া রুপা।

বিচারক কানিজ তানিয়া রুপা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দুজনকে শোকজ করা হয়। আগামী ২ জানুয়ারী তাদেরকে স্ব-শরীরে অথবা উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।

শোকজ চিঠিতে বলা হয়েছে, কুমিল্লা-৩ আসনের (মুরাদনগর) নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন গত ২৯ ডিসেম্বর প্রেরিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আপনি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন মুরাদনগর উপজেলার রহিমপুর ঈদগাহ মাঠে উঠান বৈঠকে ঈদগাহ ও কবরস্থান উন্নয়নের জন্য দশ লক্ষ টাকার তাৎক্ষণিক অনুদান প্রদান করেন। এছাড়া ধাপে ধাপে পঁচিশ লক্ষ টাকার অনুদানের ঘোষণা দিয়ে পূনরায় নির্বাচিত করার প্রার্থনা করেন। যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাংসদ ইউসুফ হারুনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ওই আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সরকার, মাছ প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ শরিফুল আলম চৌধুরী, গামছা প্রতীকের প্রার্থী মো. বশির সরকার, গোলাপফুল প্রতীকের প্রার্থী বেনজির আলম অয়নসহ অন্তত ছয়জন প্রার্থী জানান, নৌকার প্রার্থী এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের তার বাড়ীকে ডেকে এনে নগদ টাকা বিতরণ করে আসছেন। এরকম নগদ টাকা বিতরণের এমন একাধিক ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চারিদিকে সোরগোল পড়ে যায়।

মুরাদনগর উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ইউএনও আবদুস সামাদ শিকদার বলেন, মুরাদনগরে টাকা দিয়ে ভোটারদের ভোটদানে প্রভাবিত করা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। কারও বিরুদ্ধে এমন সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কুমিল্লা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান জানান, কুমিল্লা-৩ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য নির্বাচনী তদন্ত কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে।

এ আসনে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০১৮ সালে আওয়ামীলীগের মনোননয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে গত ২০১৮ সালে একবার জয়ের মুখ দেখেছেন।

অপরদিকে জাহাঙ্গীর আলম সরকার এ আসনে ১৯৯১ ও হোমনা তিতাস আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ এবং পরে ২০০৮ ও ২১০৪ সালে আবারো মুরাদনগর থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান। তবে ২০১৪ সালে মুরাদনগর আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়ার কারনে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে জাহাঙ্গীর সরকার সে সময় প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় এবং সে সময় মাঠে তেমন কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা না থাকায় ইউসুফ হারুন এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হন।

মুরাদনগরে মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এ উপজেলার ২২ টি ইউনিয়নের ১৯৮টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৭৯ জন। পুরুষ ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫০ জন, ণারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ২৩ হাজার ৪৩৬ জন। তন্মধ্যে হিজড়া ভোটার রয়েছে ৩ জন।

বার্তা বাজার/জে আই