এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের পক্ষে ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক ভুলে যাওয়া খুব কঠিন। এসব মানুষের জন্য দরকার হতে পারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। এ ছাড়া এমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যারা গেছেন, তারাও হতে পারেন আদর্শ।

গভীর প্রেমের সম্পর্ক নিমেষেই ভেঙে গেছে? যাকে প্রাণপণ ভালোবেসেছেন সেই মানুষটিই ছুড়ে ফেলেছে আপনাকে?

নিঃসন্দেহে সময়টি খুব খারাপ কাটছে আপনার, বেখাপ্পা লাগছে এতদিনের ভালোলাগা গানের কলি। বুকে চেপে বসা ভীষণ যন্ত্রণা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সারাক্ষণ। কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না, সাড়া দিচ্ছেন না ফোনকলে। ফেসবুকের ওয়ালটি বড্ড পানসে লাগছে।

প্রতিটি সম্পর্কের আকস্মিক ফাটলের পেছনের গল্পগুলো সাধারণত এ রকমই। যে মানুষটি হয়ে উঠেছিলেন প্রাণের অবলম্বন, তার বিদায়পর্ব মেনে নেয়ার কাজটি মোটেই সহজ নয়। পুরো দুনিয়া আপনার কাছে ঠেকতে পারে স্বার্থপর, আকস্মিক ভীষণ একা হয়ে পড়তে পারেন আপনি।

তবে সত্যিটা হলো, সময় ধীরে ধীরে মনের সব ক্ষত সারিয়ে দেয়। একটা সময় পর আমরা আবার স্বাভাবিকতায় অভ্যস্ত হতে শুরু করি। নতুন করে সাজিয়ে নিই জীবন।

তবে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের পক্ষে ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক ভুলে যাওয়া খুব কঠিন। এসব মানুষের জন্য দরকার হতে পারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। এ ছাড়া এমন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যারা গেছেন, তারাও হতে পারেন আদর্শ।

ব্রেকআপের ধাক্কা সামলানোর কিছু উপায় জানিয়েছে সংবাদ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস। সেগুলো তুলে ধরা হলো নিউজবাংলার পাঠকের জন্য।

বিচ্ছেদ যন্ত্রণাকে অনুভব করতে দিন

বেলজিয়ামের এন্টওয়ার্প শহরের শিক্ষক শার্লট ভ্যান গিন্সবার্গেনের বয়স ৩৬। ব্রেকআপের পর একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন শার্লট। তিনি বলেন, ‘ব্রেকআপটি আমার জন্য একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। অনেক বছর আমরা একসঙ্গে ছিলাম। ভেবেছিলাম সারা জীবন এভাবেই কাটবে। ব্রেকআপের পর প্রায়ই মনে হতো, আবার হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে।

‘ফেসবুক মেসেঞ্জারে ও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথাটি জানিয়েছিল। ও তখন দেশে ছিল না। বিদেশ থেকেই আমার সঙ্গে প্রতারণা করে।’

আপনি যদি জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তবে শুরুতেই নিজের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখবেন, বিচ্ছেদের যন্ত্রণা খুব স্বাভাবিক। ঘুম ভাঙলেই মনে হতে পারে আপনি জলন্ত উনুনে পুড়ছেন। কষ্টের এই মুহূর্তটিকে এড়ানোর চেষ্টা করার দরকার নেই।

সাইকোথেরাপিস্ট লরি সিঙ্গার বলেন, ‘ভালো না লাগা বিষয়গুলো মেনে নেয়া আমাদের জন্য কঠিন। তবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে গেলে প্রথমেই মেনে নিতে হবে এই কষ্ট পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। দুঃসময় থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা শুরুর প্রথম ধাপ এটাই হতে পারে।’

যোগাযোগ একদম বন্ধ করে দিন

যার সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনি কথা বলেছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছেন, তাকে নিমেষে অগ্রাহ্য করা সহজ কিছু না। ব্রেকআপের পর আপনি বারবার প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অধীর হয়ে উঠতে পারেন। ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে তার কোনো পোস্টে কমেন্ট করতে ব্যাকুল হতে পারে মন। তবে একদম এটা করবেন না। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন।

জৈবিক নৃতাত্ত্বিক এবং ডেটিং অ্যাপ ম্যাচের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ডা. হেলেন ফিশার বলেন, ‘এটা প্রমাণিত, যখন ব্রেকআপ হয় তখন আসক্তি থেকে মস্তিষ্কের মৌলিক অঞ্চলের ক্রিয়াকলাপ অব্যাহত থাকে।

‘যে মানুষটি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি তার টেবিলে মদের বোতল রাখবেন না। ছেড়ে যাওয়া মানুষের ছবি, চিঠি দূরে রাখুন। তাকে ফোন করবেন না, মেসেজ দেবেন না। ফেসবুকে মিচ্যুয়াল ফ্রেন্ডের মাধ্যমে তাকে খুঁজবেন না। মনে রাখবেন সে আপনার মাথায় ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকতে চাইছে। তাকে আপনার ঝেড়ে ফেলতে হবে।’

সঙ্গীর সিদ্ধান্ত মেনে নিন

‘প্রাক্তনকে কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন’ শিরোনামে কিছু বাজে নিবন্ধ অনলাইনে ছড়িয়েছিটিয়ে আছে। এতে সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে ন্যূনতম ৩০ দিন সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়, যাতে এ সময়ের মধ্যে প্রাক্তন তার ভুল ভুল বুঝতে পারেন।

তবে এভাবে প্রাক্তনের মন পরিবর্তনের ভাবনা মাথা থেকে দূর করুন। চলে যাওয়া সঙ্গীর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানান। তার জন্য অপেক্ষা বন্ধ করুন। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সঙ্গী ফিরে আসে না।

কঠিন হলেও এটা বাস্তবতা। আপনি এমন কারও জন্য কেন অপেক্ষা করবেন যিনি তার জীবন থেকে আপনাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে!

নিজেকে সম্মান করা শিখুন। নিজেকে বেশি বেশি ভালোবাসুন।

অনুসরণ করা বন্ধ করুন

রাত গভীর হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি কি প্রাক্তনের ছায়া অনুসরণ করছেন? ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে অন্যের ট্যাগ করা কোনো ছবিতে তাকে খুঁজছেন? প্রাক্তন কী করছেন, কাদের সঙ্গে তার মেলামেশা তা নিয়ে নানান অনুমানে নিজেকে মগ্ন রাখছেন? এসবই বন্ধ করুন।

উইল্টশায়ারের ২২ বছরের তরুণী সাশা মেইনকে তিন বছর আগে আকস্মিক তার সঙ্গী ছেড়ে যান। সে সময়ে অনেক ভুগেছেন সাশা। তিনি বলছিলেন, ‘আমার মনে হয় তখন যে কাজটি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে সেটি হলো তাকে ফেসবুকে ব্লক না করা।’

প্রাক্তন কী করছেন তা জানার চেষ্টা করা অবশ্যই স্বাভাবিক, তবে আপনি যা-ই খুঁজে পান না কেন তা আপনাকে প্রশান্তি দেবে না।

সাশা বলেন, ‘তখন করোনার কারণে লকডাউন চলছিল। সব সময় ওর ফেসবুক প্রোফাইল চেক করতাম। নতুন গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে যখন ওর ছবি দেখতাম, তখন ভেঙে পড়তাম।

সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং ডেটিং অ্যাপ সো সিঙ্কডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেসিকা অ্যাল্ডারসন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রাক্তনের প্রোফাইল ঘেঁটে আপনি কখনোই ইতিবাচক কিছু অনুভব করবেন না। আপনাকে আসলে ভাবতে হবে কী করলে আনন্দিত হবেন। মনে রাখবেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারও স্ট্যাটাস দেখে মানুষের সত্যিকারের অবস্থান বোঝা বেশ কঠিন।’

নিজের প্রতি মনোযোগ দিন

এখনই সেই সময় যখন আপনাকে বিশ্বের সবচেয়ে স্বার্থপর ব্যক্তি হতে হবে। আপনি যা চান তার সবকিছু করুন। রেস্তরাঁয় সঙ্গীর অপছন্দের কারণে যে খাবারটি এতদিন মুখে তোলেননি, সেটি এবার পেটপুরে খান। তার কারণে যদি আপনি যদি নাকে ছিদ্র না করে থাকেন, তাহলে এখনই সময়। পারলারে ছুটে যান।

ইচ্ছা থাকলেও যে সিনেমাগুলো সঙ্গীর কারণে দেখেননি, সেগুলো চুটিয়ে দেখতে বসুন। নতুন নতুন রান্নাপ্রণালি আবিষ্কারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করুন। সপ্তাহান্তে কোথাও ঘুরে আসুন।

বিশ্বাস করুন আপনি পারবেন। আপনাকে আনন্দ দেয়া বিষয়গুলো খোঁজা অনেক জরুরি। এই অন্বেষণ আপনার হৃদয়ের ক্ষত পূরণে সাহায্য করতে পারে।

শার্লট বলেন, ‘বছরের পর বছর মনে হতো সে ছিল আমার পারফেক্ট ম্যাচ। এমন সঙ্গী জীবনে আর পাব না। এই ভাবনা আমাকে পিছিয়ে দিয়েছিল। আসলে কেউ কারও জন্য পারফেক্ট নয়। এটা করে নিতে হয়।’

আপন গতিতে এগিয়ে যান

বলা হয়ে থাকে, কাউকে পেতে হলে তার কাছে নিজেকে উজাড় করে দিতে হয়। এটা কি সত্যিই জরুরি? উষ্ণ কোনো নতুন শরীর অবশ্যই আপনাকে পুরোনো সুখ দিতে পারে। তবে তাই বলে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা কাটাতে হুট করে কারও সঙ্গে জড়িয়ে পড়বেন না। এটা দুই পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্য সম্পর্কে জড়াতে তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়। খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য নিজেকে আগে সময় দিন। আপনি নতুন একটি সম্পর্কে যেতে চান কিংবা সম্পর্কে থাকা দরকার কি না, তা আগে ভাবুন। সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে পরে পস্তাতে হতে পারে।

বার্তা বাজার/জে আই