শরীরের বাড়তি ওজন ঝরাতে কত কিছুই না করেন। কঠোর ডায়েট সেই সঙ্গে শারীরিক কসরত। তবে একবিংশ শতাব্দীতে ওজন কমানোর অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি থাকলেও ১৪৩ কেজি এজন কমিয়ে যিনি বিশ্বরেকর্ড করেছিলেন তার সময়ে তার কিছুই ছিল না।

সময়টা ১৯৬৫ সাল, ২৭ বছরের যুবক আঙ্গাস বারবেরিয়। হঠাৎ করেই তার ওজন হু হু করে বাড়তে থাকে। তেমন কোনো রোগ ধরতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা। একসময় আঙ্গাসের ওজন দাঁড়ায় ২১৩ কেজিতে। শরীরে বাঁধতে থাকে নানান রোগ।

সামান্য এদিক সেদিক ফিরতেই কষ্ট। ধেয়ে আসছে কটাক্ষও। অগত্যা না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। না খেয়েই কাটিয়ে দিলেন ৩৮২ দিন। ওজন ঝড়ালেন ১২৫ কেজি। স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা আঙ্গাস টানা ৩৮২ দিন না খেয়ে কাটিয়ে ছিলেন। এমনটা অবশ্য নিজে নিজে করেনি। চিকিৎসকদের পরামর্শেই করেছিলেন।

কোনও অজ্ঞাত কারণে আঙ্গাসের ওজন বাড়ছিল হু হু করে। শারীরিক ও মানসিক দুই দিক দিক দিয়েই সমস্যায় পড়ছিলেন তিনি। শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে নানা রোগ। এই অবস্থায় ব্য়ায়াম বা খাওয়া দাওয়া কম করে কাজ হত না সহজে। উপায়ন্তর না দেখে তিনি চিকিৎসকরে পরামর্শ নেন।

এটা যে সময়ের কথা সে সময় চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নত মানের ছিল না। ওজন কমানোর ওষুধও পাওয়া যেত না। ওজন কমানোর বিশেষ পদ্ধতিও তখন আবিষ্কার হয়নি। চিকিৎসকরাও ফাঁপড়ে পড়েন, বুঝতে পারছিলেন না কীভাবে আঙ্গাসের ওজন কমানো যাবে। আঙ্গাসও হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না। শেষে চিকিৎসকরা আঙ্গাসের কথা শুনে এক অদ্ভূত অভিনব পদ্ধতিতে ওজন কমানোর চিকিৎসা শুরু করেন।

চিকিৎসকরা সব দিক বিচার করে দেখেন আঙ্গাসের ক্ষেত্রে ওজন কমানোর একমাত্র উপায় খাওয়া কমানো। যেসব খাবারে ওজন বাড়ে সেই সব কিছুই আঙ্গাসের খাদ্য তালিকায় ছিল। ওজন কমানোর জন্য আঙ্গাসের খাদ্যতালিকা প্রায় ফাঁকা করে দিতে চিকিৎসকরা বাধ্য হন। শুধু পানি, চা ও কফি তার খাবার হিসেবে বরাদ্দ হয়। এভাবেই দিনের পর দিন উপোস চলতে থাকে তার। এভাবে এক দিন-দু’দিন করে মাস কেটে গিয়ে বছর ঘোরে।

প্রথম দিতে অবশ্য বেজায় অসুবিধা হত এভাবে না খেয়ে থাকতে। কিন্তু মুখে আগল দিয়ে, লোভ সম্বরণ করেই একটা সময়ের পর স্রেফ জল আর চা খেয়েই দিব্যি আঙ্গাস দিন কাটাতে থাকেন। ৩৮২ দিন পর চিকিৎসকরা ফের পরীক্ষা করেন তাকে। তখন দেখা যায় আঙ্গাসের ওজন ১২৫ কেজি থেকে কমে গিয়েছে। ২১৩ থেকে সেই ওজন পৌঁছেছে ৮৮ কেজিতে। চিকিৎসকরা সেদিন আঙ্গাসকে আবার খাওয়া শুরুর পরামর্শ দিলেন।

চিকিৎসকদের কথা মতো ৩৮২ দিন পর ফের খাবার খেলেন আঙ্গেস। ডিম-পাউরুটি খেয়ে উপোস ভাঙল আঙ্গাসের। ওজন কমিয়ে তখন আঙ্গাসের এক গাল হাসি। এই ঘটনা সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। রেকর্ডের খাতায় নামও উঠল আঙ্গাসের। অনেকই ভেবেছিলেন এরকম ভয়নাক উপোস করার ফলে তার শরীর ভেঙে যেতে পারে। তবে ওজন কমা ছাড়া আঙ্গাসের আর কোনো রোগ হয়নি। অভিনব এই চিকিৎসার পর তিনি প্রায় ২৪ বছর বেঁচে ছিলেন। চিকিৎসকদেরও অবাক করেছিল বিষয়টি।

তবে এমন পদ্ধতিতে ওজন কমানো বর্তমান সময়ে একেবারেই স্বীকৃতি দেন না চিকিৎসকরা। এই পদ্ধতিতে ওজন কমাতে গিয়ে অনেকে প্রাণও হারিয়েছেন। তবে আঙ্গাস বিরলতম উদাহরণ হয়েই থেকে গিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করেছিলেন না খেয়েও এতদিন বাঁচা সম্ভব।

বার্তাবাজার/এম আই