পৃথিবীর দক্ষিণতম প্রান্তে বিশাল আর নির্জন এক মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। যেখানে ৬ মাস আকাশে থাকে সূর্য আর বাকি ৬ মাস অন্ধকার। এ সময়ে অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা নামতে পারে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত! এমন পরিবেশেও সেখানে মানুষ থাকে, চলাচল করে বিমান, রয়েছে ইন্টারনেট কানেকশন!

তবে এই মহাদেশে কোন সাধারণ মানুষ থাকে না। যারা থাকেন তাদের কাজ শুধুমাত্র গবেষণা করা। মহাকাশে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের নভোচারীদের চেয়েও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় অ্যান্টার্কটিকায় থাকা গবেষকদের।

অ্যান্টার্কটিকার বাতাসে কোন আদ্রতা নেই ফলে গবেষকরা খুব সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন চর্মরোগ ও ডিহাইড্রেশনে। এছাড়াও এই মহাদেশের অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯৫০০ ফুট উঁচুতে। ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণও স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এখানে সব মিলিয়ে প্রায় ৭০টি স্থায়ী রিসার্চ স্টেশন রয়েছে। যেখানে উষ্ণ মৌসুমে সর্বোচ্চ ১২০০ জন পর্যন্ত থাকেন। প্রতিটি স্টেশনের রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য। তবে এগুলো এমনভাবে তৈরি যেনো প্রচন্ড বৈরি পরিবেশ থেকে গবেষকদের রক্ষা করতে পারে।

গবেষকরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাদের চিকিৎসা দিতে প্রতিটি রিসার্চ স্টেশনে সবসময়ই থাকেন ডাক্তার। এর পরেও কেউ যদি গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান তাহলে ভিডিও কলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না।

ইন্টারনেট সুবিধাও রয়েছে অ্যান্টার্কটিকায়। তবে তা খুবই সীমিত। যেহেতু এর অবস্থান পৃথিবীর একদম দক্ষিণে তাই স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ হয় খুবই কম এবং দিনে মাত্র ৩ ঘণ্টা সবল থাকে ইন্টারনেট, এছাড়া সারাদিন তা থাকে খুবই দুর্বল। সেই ৩ ঘণ্টার মাঝেই গবেষকরা ডেটা ট্রান্সফার, প্রিয়জনদের সাথে কথা বলা বা অন্যান্য জরুরি কাজ সেরে ফেলেন।

বিমান ছাড়া অ্যান্টার্কটিকায় যাওয়ার কোন উপায় নেই। সেই বিমানও আবার বছরে মাত্র ৩ মাস চলাচল করতে পারে, যখন তুষারপাত হয়। আর বাকি ৯ মাসই গবেষকরা থাকেন পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন। অ্যান্টার্কটিকায় যাওয়া বিমানের পাইলটদের দেয়া হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ। আর যেহেতু সেখানে কোন রানওয়ের সুযোগ নেই, তাই তুষারের উপর রোলার চালিয়ে অস্থায়ী রানওয়ে তৈরি করা হয়। আর বিমানগুলোতেও থাকে বিশেষ গিয়ার।

এই কঠিন পরিবেশেও গবেষকরা তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন কারণ এন্টার্কটিকার জলবায়ু পৃথিবীর বাকি অঞ্চলের জলবায়ুর গবেষণাকে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সালে ব্ল্যাকহোলের প্রথম ছবি নেয়া ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের একাংশও রয়েছে এই অ্যান্টার্কটিকাতেই।

বার্তাবাজার/এম আই