সময়ের আবর্তনে আজ বন্ধুরা সবাই ব্যস্ত, আবার অনেকে হারিয়ে গেছে। ব্যস্ততায় আর চায়ের কাপে, খেলার মাঠে জমে উঠে না আড্ডা। আবার কবে সবাই মিলে আড্ডা দিব সেটাও অনিশ্চিত। বন্ধুত্ব হলো চলমান একটি প্রক্রিয়া। জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রতিটি মুহূর্তে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়ে থাকে। তবে আস্থা ও নির্ভরতার বন্ধুত্ব স্কুলজীবনের বন্ধুরাই। স্কুলজীবনের বন্ধুদের নিয়ে প্রাণখুলে হাসি-ঠাট্টা, স্কুল ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, গল্প, আড্ডা, খেলাধুলা আর বিভিন্ন তর্ক-বিতর্কসহ দুষ্টুমিতে কেটেছিল আমদের সেই সময়টা। সেই বন্ধুদের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসা, স্নেহ এসব একসাথে পারস্পরিক আত্মার দৃঢ়তা শক্তিশালী বন্ধনে রূপ নিয়েছিল আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ের মাঝে এ বন্ধুত্বে ভাঙা-গড়া চলতেই থাকে। সেভাবেই গড়ে উঠেছিল আমাদের বন্ধুত্ব।

২০১৭ সালের দিকে বন্ধুরা মিলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বালুচর প্রজেক্টে ঘুরতে যাওয়া হয়েছিল। বন্ধুদের মাঝে স্মরণীয় ছিল সেই দিনের একটা ঘটনা। স্কুল পালিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম সাব্বির, হিমু, বায়জিদ, নাঈম, রাসেল, সুপ্ত, ফাহিম। এ ট্যুরের পরামর্শদাতা ছিল আসমা, সায়েমা ও রোকেয়া। আমাদের ব্যাচ ছিল নবীনগর শাহওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০১৮ সালের। বয়সটা ছিল আঠারো এপার-ওপার , সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই আঠারো বছর কবিতা, ‘আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়, পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা, এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়, আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।’ যাওয়া হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার বালুচর প্রজেক্টে যেটা বুড়িগঙ্গার পার্শ্ববর্তী একটি গ্রাম।

তবে যাই হোক, বন্ধু হলো চাঁদের মতো। চাঁদনী রাতে যেখানে যাবেন, সঙ্গে চাঁদ যাবেই। পৃথিবীর যে প্রান্তে যান না কেন, দূর আকাশ থেকে জানিয়ে দিবে চাঁদের অবস্থান, ‘বন্ধু আমি আছি, থাকবো, অনন্তকাল।’ বন্ধুত্ব হলো সেরকম উপলব্ধির বিষয়। এই উপলব্ধি সবাইকে দেয় সুখের পরশ। তাই সত্যিকার বন্ধুত্ব সম্পর্ক কখনোই বদলায় না, বদলায় সময় আর এ আশাটা মনে রোপণ করে রাখাটা হলো আমাদের কর্তব্য। এ বন্ধন অটুট থাকে আজীবন। এ ক্ষণিকের সময়ে অনেক বন্ধু পাওয়া যায় তাদের অধিকাংশই বন্ধুত্ব থেকে স্বার্থের গুরুত্বটা ভালো বুঝে। কিন্তু স্কুল জীবনের সেই বন্ধুগুলো ছিল এক ভিন্ন রকমের, যাদের দেখলে বুঝা যায় কতোটা আকাঙ্ক্ষা ছিল সেই বাল্যকালের বন্ধুদের জন্য। প্রতিদিন অস্ত আসে, অস্ত চলে যায় কিন্তু তোমরা আর আসো না। দিনশেষে একটাই প্রত্যাশা, বন্ধু যেখানে থাকো ভালো থেকো, আজও তোমাদের অপেক্ষায়।

বার্তাবাজার/এম আই