আবদুল আজিজ ওরফে খুমিনি হুজুর। ১৯৭০ সাল থেকে গত জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত মোট ১১টি (একটি উপনির্বাচনসহ) নির্বাচনে এমপি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার আবদুল আজিজ ওরফে খুমিনি হুজুর (৭৫)।

তারই ধারাবাহিকতায় এবারও (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনেও কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। খুমিনি হুজুরের বাড়ি বরুড়া উপজেলার সাউথপাড়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের প্রয়াত আবদুর রহিমের ছেলে।

কুমিল্লার রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর কুমিল্লার রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক খন্দকার মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমানের কাছে খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন খুমিনি হুজুর। এর আগে তিনি জেলার বরুড়া, কুমিল্লা সদর, মুরাদনগর এবং দেবীদ্বার আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। একবার নির্বাচন করেছেন দুটি সংসদীয় আসন থেকে। তবে কোনো নির্বাচনেই জয়ের মুখ দেখেননি খুমিনি হুজুর। এ নিয়ে হতাশও নন তিনি।

খুমিনি হুজুর বলেন, ‘আমি ১৯৭০, ১৯৭৯ এবং ১৯৮৬ সালে বরুড়া আসন থেকে, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে (দুটি সংসদ নির্বাচন) দেবীদ্বার আসন থেকে, ২০০১ সালে দেবীদ্বার এবং মুরাদনগর (দুই আসন থেকে), ২০০৪ সালে বরুড়া আসনের উপনির্বাচনে, ২০০৬ সালে কুমিল্লা সদর আসন থেকে সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং আমি প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম।

২০০৮ সালে দেবীদ্বার আসন থেকে, ২০১৮ সালে বরুড়া আসন থেকে নির্বাচন করেছি এবং চলতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরুড়া আসন থেকে মনোনয়ন ফরম জমা দিলাম। ২০১৪ সালে আমার দল নির্বাচন বর্জন করেছিল। তাই প্রার্থী হতে পারিনি। এ ছাড়া ১৯৭২ সালে চেয়ারম্যান পদে এবং ১৯৯৯ সালে মেয়র পদে নির্বাচন করেছি।’

খুমিনি হুজুর আরও বলেন, ‘আমি ধর্মীয় প্রচারের অংশ হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমার নিজের প্রচার আমি নিজেই চালাই। আমার বাবা এবং পীরের নির্দেশেই বারবার ইলেকশন করছি। বর্তমানের যে গণতন্ত্র, এ গণতন্ত্রে মানুষের মঙ্গল আসবে না; মানুষের মঙ্গল আসবে খেলাফতে। আমি নির্বাচনী প্রচারে মানুষকে এ বার্তাই পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের দলীয় প্রতীক বটগাছ। বটগাছ মার্কায় আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।’

‘খুমিনি হুজুর’ নামে পরিচিত মাওলানা আব্দুল আজিজ দীর্ঘদিন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধামতি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ওয়াজ মাহফিল করে যে টাকা পাই, তা দিয়েই আমি আমার নির্বাচনী খরচ- প্রচার চালাই। আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে জনগণের এক টাকাও স্পর্শ করব না। সরকারের কাছ থেকে যা টাকা বেতন পাব, সব মানুষের পেছনে খরচ করব। আমার প্রচার আমি নিজেই করি। আমার ছেলেকেও আমি প্রচারে আনি না।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্মৃতি উল্লেখ করে মাওলানা আবদুল আজিজ বলেন, ‘২০০৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কুমিল্লা সদর আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেন। সে ইলেকশন আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য পার্টি বর্জন করল। সে সময় আমিই প্রথম কুমিল্লাতে মনোনয়নপত্র জমা দিই। পুলিশ/মিলিটারির ব্যারিকেডের ভেতর দিয়ে গিয়ে আমি নমিনেশন পেপার সাবটিম করি। পরে আওয়ামী লীগ বলল, আমরা ইলেকশন করব। এরপর নির্বাচন ১০ দিন পিছিয়ে দেওয়া হলো। পরে ওয়ান-ইলেভেনে ফখরুদ্দীন আর মঈনুদ্দিন সাহেব না এলে সে নির্বাচনে আমি তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারতাম।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সরকার সব দলকে ডেকে নির্বাচনটা করলে ভালো হবে। নির্বাচন কিছুদিন পিছিয়ে দিলে ভালো হবে। পাশাপাশি আমি নির্বাচন কমিশনকে বলব, প্রত্যেক প্রার্থীকে আলাদা আলাদা মিছিল-মিটিংয়ের সুযোগ না দিয়ে একই মঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ করে দিন। তাহলে দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হবে না। তারা মঞ্চে এসে জনগণের জন্য কে কী করবেন তা বলে দেবেন। এই মিছিলগুলো বন্ধ করতে হবে। আমি মনে করি, এ বছর যে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের লোকেরা দাঁড়াচ্ছেন। এতে করে তাদের মধ্যে কাটাকাটি হবে।’

বার্তাবাজার/এম আই