প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বর্তমানে মানুষের জীবনে গতি আনলেও এর বিরম্বনাও কম নয়। এই মাধ্যমে দিনদিন বেড়েছে অপরাধপ্রবণতাও। অপরাধীদের বিভিন্ন চক্র গড়ে উঠেছে। যারা প্রযুক্তির বিষয়ে খুব বেশি দক্ষ নন, নানা কৌশলে তাদের ফাঁদে ফেলে প্রতারকরা।

আর সাইবার জগতে এসব প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষকে সহযোগিতা করতে কাজ করছেন দেশের একাধিক সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট। তাদের মধ্যে একজন মহি উদ্দিন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার চন্দ্রপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া এই যুবক বর্তমানে সৌদি আরবের রিয়াদে বসবাস করছেন। বিদেশের মাটিতে বসেই দীর্ঘদিন ধরে তিনি অনলাইনে বিপদগ্রস্ত দেশের মানুষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছেন।

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই ইন্টারনেট প্রযুক্তির প্রতি অসীম আগ্রহ ছিল মহি উদ্দিনের। সেই আগ্রহ থেকে তিনি ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে সচেতন ছিলেন। তবে মহিউদ্দিনের সাইবার যাত্রা শুরু হয় এক নাটকীয়তার মাধ্যমে। ২০১২ সালে বড় ভাইয়ের ফেসবুক আইডি হ্যাক হলে সেটি উদ্ধার করার কাউকে না পেয়ে নিজেই এই সেক্টরে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর কাজ শিখতে ধীরে ধীরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গ্রুপে নিজেকে যুক্ত করেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালে রাশিয়ার একটি গ্রুপে কাজের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে অনলাইনে এসে মানুষকে সেবা দেওয়া শুরু করেন। বর্তমানে সে Cyber Gang Underground Force নামে একটি বাংলাদেশি গ্রুপে সাইবার সিকিউরিটি স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।

মহি উদ্দিন বলেন, সাইবার জগতে মানুষের প্রবেশ দিন দিন বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে। ফলে কোনো না কোনোভাবে সাইবার অপরাধের ঝুঁকিতে পড়ছে যে কেউ। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষের সাইবার সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়লে তাঁরা সেটি প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে কেউ যদি প্রতারণার শিকার হয়ে আমাদের জানায়, তখন আমরা সেটি নিয়ে কাজ করে থাকি।

যেমন বর্তমানে এক শ্রেণির অনলাইন চাঁদাবাজ ফেসবুক পেইজে ফেইক কপিরাইট দিয়ে টাকা দাবি করছে, হুমকি দিচ্ছে। এমনকি অনেকের ইউটিউব, ফেসবুক আইডি/পেইজও হ্যাকের স্বীকার হচ্ছে। এসব বিষয় আমাদের জানালে আমরা সেটি রিকোভার করে দেই। এছাড়াও সাইবার জগতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকি।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই সাইবার সিকিউরিটি ও হ্যাকিংয়ের প্রতি আমার গভীর আগ্রহ ছিল। আমার ইচ্ছা ও আগ্রহ দেখে অনেকেই হাসাহাসি করতেন। তবে আমি কখনো হতাশ হইনি। বর্তমানে মানুষের দোয়ায় সোস্যাল প্লাটফর্মে একজন সফল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ খ্যাতি অর্জন করেছি। স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সেলেব্রিটি, অভিনেতা-অভিনেত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতারণার শিকার হয়ে আমার শরণাপন্ন হন। তাদের সমস্যাগুলো অনলাইনের মাধ্যমে সমাধান করে দেই। এতে খুবই ভালো লাগে। বিদেশের মাটিতে বসেও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারছি এটাই আনন্দের।

মহি উদ্দিন বলেন, দেশের সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আমি ও আমার টিম কাজ করে যাচ্ছি। মাসে যতটুকু কাজ হয় তা দিয়ে গরীর ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমি মনে করি মানুষ মানুষের জন্য।