দেবীদ্বারে সম্প্রতি সংখ্যালঘুর উপর হামলা মারধরের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের কারনে উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল আলম সাংবাদিক শফিউল আলম রাজীবের উপর হামলা ও মারধর করে তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভাংচুর করার অভিযোগ উঠেছে।

সাংবাদিক শফিউল আলম রাজীব দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের সূর্যদয়ের প্রতিনিধি। ঘটনার পর সন্ধ্যায় দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের জরুরী সভায় এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনারও দাবী জানানো হয়।

জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় দেবীদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি বাসভবনে (গোমতী) সংবাদ সংগ্রহে গেলে ওই উপজেলার ৮নং জাফরগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল আলমের সমর্থক বিল্লাল গাজী, আফসান রুবেলসহ আরো তিন চারজন প্রথমে গালমন্দ ও পরে হামলা চালিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে এবং মাথায় আঘাত করে। ওই সময় সাংবাদিক রাজীব ঘটনাটি জানাতে উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি বাসভবনে গেলে ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল আলম পুনরায় সাংবাদিক রাজীবকে মারধর করে এবং মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভাংচুর করে।

ঘটনার পর তাৎক্ষনিক বিষয়টি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, ইউএনও নিগার সুলতানাকে জানানো হয়। ঘটনার পর সন্ধ্যায় পৌনে ৭টায় জেলা ও উপজেলার কর্মরত সাংবাদিকরা দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের এক জরুরী সভায় ওই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়য়ে অবিলম্বে ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদসহ হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনারও দাবী জানান।

হামলায় আহত সাংবাদিক শফিউল আলম রাজীব জানান, বিএনপির ডাকা ৭২ ঘন্টা অবরোধ চলাকালে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে অবরোধের বিরুদ্ধে একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। তখন আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্য আনতে তার সরকারি বাসভবনে গেলে জাহিদ চেয়ারম্যানের ৪ সমর্থক প্রথমে গালসন্দ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে এবং মাথায় আঘাত করে, আমি ওখান থেকে চেয়ারম্যানের বাসায় ঢুকে বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানাতে গেলে জাহিদ চেয়ারম্যান আমাকে বলে তুই রাজীব, সংখ্যালঘুর উপর হামলা করেছি বলে রিপোর্ট করেছিস, এই বলে আমাকে গালমন্দ ও পুনরায় হামলা এবং মারধর করতে থাকে। এসময় তার মারধর এবং গালমন্দের ঘটনা রেকর্ড করতে মোবাইল ফোনটি পকেট থেকে বের করলে জাহিদ চেয়ারম্যান মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে ভাংচুর করে।

হামলার বিষয়ে জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুল আলম বলেন, সাংবাদিকের উপরে কোন প্রকার হামলা বা মোবাইল ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। তবে সাংবাদিক রাজীবের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে, যা আমার উচিত হয়নি। বিষয়টি দ্রুত মিমাংসা করার জন্য গুনাইঘর উত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মোকবল হোসেন মুকুলকে দায়িত্ব দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান।

এ ব্যাপারে দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, বিষয়টি মিমাংসার জন্য সুলতানপুর ও গুনাইঘর ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

রাত পৌনে ৯টায় এ ব্যপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর জানান, ঘটনাটি শুনেছি, তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য- বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি মো. শাহালম ইউপি চেয়ারম্যানে জাহিদের আপন ভাই হবার সুবাদে সে ক্ষমতাকে পুঁজি করে একের পর এক সংখ্যালগুকে নির্যাতন করাসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, জমি ও বসতভিটা দখলের কন্ট্রাকও নেন তিনি। তার বিরুদ্ধের কোন অভিযোগের ব্যবস্থা না নেয়ায় কাউকেই পাত্তাই দেননা তিনি।

পুলিশ ভাইয়ের ক্ষমতার ‘দাপট’ দেখানো ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদ সম্প্রতি এক হিন্দু পরিবারকে নির্যাতন করে উচ্ছেদ করার একটি ভিডিও ভাইরাল হলেও সংখ্যালগু পরিবারের দায়ের করা অভিযোগটি তখন আমলেই নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি মো. শাহালমের মন্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বার্তা বাজার/জে আই