সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর আনোয়ার কবীরের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জনিয়েছেন শিক্ষকবৃন্দ।

জানা গেছে, চতুর্থ প্রাথমিক উন্নয়ন কর্মসূচির (পিডিবি-৪) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরাদেশের ন্যায় কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ৩ দিনব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাক্রম বিস্তারণ প্রশিক্ষণ গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। এই প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সরকারি বরাদ্দ থেকে মোটা অংকের টাকা বাঁচিয়ে নিম্নমানের প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রদানসহ নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন ইন্সট্রাক্টর আনোয়ার কবীর।

ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক বলেন, কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে প্রতিব্যাচে ৩০ জন করে ২৪ টি ব্যাচে মোট ৭২০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য তথ্যপত্র, কলম, প্যাড, নেমকার্ড, পেন্সিল, ইরেজার এর জন্য বরাদ্দ ৫০০ টাকা এবং প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর ব্যাগ বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৫০০ টাকা। দিনপ্রতি সম্মানী ৫শ’ টাকা ও লান্স বাবদ বরাদ্দ আছে ২৮০ টাকা।

সরজমিনে যেয়ে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণার্থীদের যে তথ্যপত্র সরবরাহ করা হয়েছে তার সর্বোচ্চ মূল্য ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। এছাড়া ১৫ টাকা মুল্যের একটি কলম, ৫ টাকা মুল্যের একটি নেমকার্ড, ২০ থেকে ৩০ টাকা মুল্যের একটি ডায়েরি প্রদান করা হয়েছে। ৫ শ’ টাকা মূল্যমানের ব্যাগ সরবরাহের কথা থাকলেও যে ব্যাগটি প্রদান করা হয়েছে তার সর্বোচ্চ বাজারমুল্য ৩০০ টাকা। এসব খাতে প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর জন্য একহাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করা হচ্ছে সাড়ে ৫শ’ টাকা। ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ প্রতি প্রশিক্ষণার্থীর নিকট থেকে ৯০ টাকা নিয়ে সরকারকে প্রদান করছেন ২৪ টাকা। তথ্যপত্র বইয়ের ফটোকপি বিল বেশী দেখানো হচ্ছে।

এমনকি ৩ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে যে সনদপত্রটি প্রদান করা হচ্ছে তার কাগজও মানসম্মত নয়। ইতোমধ্যে ৪ টি ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এভাবে ২৪ টি ব্যাচে মোট ৭২০ জন প্রশিক্ষণার্থীর নিকট থেকে তিনি সাড়ে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন। এছাড়াও ইন্সট্রাক্টর আনোয়ার কবীর একই সাথে কোর্স কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্বে আছেন, অপরদিকে তিনি প্রশিক্ষকের দ্বায়িত্বও পালন করে দুইদিক থেকে সন্মানী গ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে। তার এমন কর্মকান্ডে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে চতুর্থ ব্যাচে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শিক্ষক নেতারা এ সকল অনিয়মের প্রতিবাদ জানালে ইন্সট্রাক্টর আনোয়ার কবীর তাদেরকে উপকরণ বাবদ ১০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ১০০ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে পঞ্চম ব্যাচের প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে আবাও পূর্বের ন্যায় অনিয়ম শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইন্সট্রাক্টর আনোয়ার কবীরের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকবৃন্দ।

এ ব্যাপারে জানার জন্য মুঠোফোনে কালিগঞ্জ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর আনোয়ার কবিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বার্তা বাজার/জে আই