ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা পরিষদের বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষে বিজয় মিছিল করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার উপজেলার নশাসন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের স্ত্রী সানজিদা তালুকদার ৩৫ ব্যক্তিকে আসামী করে এ মামলাটি দায়ের করেছেন। ওই মামলায় এক পরিবারের ৩ স্কুল শিক্ষকসহ ৪ জনকে আসামী করা হয়েছে। যাদের মধ্যে দুই শিক্ষক ভোট কেন্দ্রে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওই দুই শিক্ষককে আসামী করায় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ আলোচনা সমালোচনার জন্মদেয়।

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার আগেই বুধবার বিকাল ৫টার দিকে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী ইসমাইল হকের সমর্থকরা ডগ্রি বাজারে বিজয় মিছিল করেন। ওই সময় সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদারসহ ১৫ জন আহত হন। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় ১৫ টি বসত বাড়ি, ১০টি দোকান ভাংচুর ও ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে এক পক্ষের মামলায় নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা বিঝারী উপসী তারা প্রশন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হাফিজুর রহমান ওরফে টুলু শেখ ও চন্ডিপুর মনিরাবাদ বাঘাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতান মাহমুদ ওরফে স্বপন শেখকে আসামী করা হয়েছে।

সুরেশ্বর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলী আজগর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, সুলতান মাহমুদ স্বপন আমার সাথে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই দিন একটি মারামারির ঘটনার মামলায় তাকে আসামী করা হয়েছে শুনে খারপ লেগেছে। এটা উচিৎ হয়নি। এভাবে কোন শিক্ষককে হয়রানি করা ঠিক নয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার নড়িয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিজয়ী হয়েছেন শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ইসমাইল হক। আর পরাজিত হন নড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মামুন মোস্তফা। নশাসন ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদার ও ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কাদের মুন্সি মামুন মোস্তফাকে সমর্থন করেন। আর বিঝারী উপসী তারা প্রশন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমীন, লিটন হাওলাদার, মাহাবুব ফকির ও নুরুজ্জামান হাওলাদরসহ তাদের স্বজনরা ইসমাইল হকের পক্ষ নেন।

বুধবার ফলাফল ঘোষনার আগে নুরুল আমীন, লিটন হাওলাদার,মাহাবুব ফকির ও নুরুজ্জামান হাওলাদেরের নেতৃত্বে ডগ্রি বাজারে বিজয় মিছিল বের করা হয়। ওই মিছিল থেকে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদারের বাসভবন ও বিপনি বিতানে হামলা করা হয়। তখন দেলোয়ার হোসেন তালুকদার এমন আচরনের বিষয় জানতে চান। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দেলোয়ার তালুকদারসহ দুই পক্ষের ১৩ জন আহত হন। তখন দেলোয়ারের বিপনি বিতানের ১০টি দোকানের সাটার ভাংচুর করা হয়।

পরে রাতে দেলোয়ারের সমর্থকরা ডগ্রি মাদবর কান্দিতে মাদবর বাড়িতে হামলা করেন। সেখানে ১৫টি বসত ঘর ভাংচুর করা হয়। ঘরের আসবাবপত্র,ব্যবহারের জিনিসপত্র ভাংচুর করা হয়,৮-১০টি গবাদিপশু নিয়ে যাওয়া হয়। দুটি মটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। একটি মটর সাইকেল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সময় আমেনা বেগম ও লুৎফা বেগম নামে দুই বয়স্ক নারীকে মেরে আহত করা হয়েছে।

ওই ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদারের স্ত্রী সানজিদা তালুকদার বাদী হয়ে ৩৫ ব্যক্তিকে আসামী করে নড়িয়া থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় বিঝারী উপসী তারা প্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমীন, তার ছেলে হিমেল শেখ, ভাই সুলতান মাহমুদ স্বপন শেখ ও চাচাত ভাই হাফিজুর রহমান টুলু শেখকে আসামী করা হয়েছে।

এদের মধ্যে সুলতান মাহমুদ স্বপন নড়িয়ার মনিরাবাদ বাঘাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি ওই ঘটনার সময় চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর হাফিজুর রহমান বিঝারী উপসী তারা প্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালযের সহকারি শিক্ষক। তিনি ওই ঘটনার সময় ভড্ডা কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

হাফিজুর রহমান বলেন, আমি শিক্ষক মানুষ। কোন রাজনীতির সাথে জরিত নই। আমাদের পরিবারের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার তালুকদারের ৩০ বছরের পুরনো বিরোধ রয়েছে। এ কারনে শত্রুতা উদ্ধার করতে আমাকে আসামী করা হয়েছে। এটা নতুন কোন বিষয় নয় ইতি পূর্বে তিনি আমার ও আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বেশকিছু মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যা আদালতের মাধ্যমে মিথ্যা পতিপন্ন হয়। এ মামলার ঘটনার সময় সময় আমি নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করছিলাম।

সুলতান মাহমুদ স্বপন শেখ বলেন, বুধাবার আমি উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহনের দায়িত্বে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নড়িয়ায় ছিলাম। কিন্তু কি কারনে ওই দিন ৫টার সময ঘটে যাওয়া ঘটনার একটি মামলায় আসামী করা হলো আমি বুঝতে পারছি না। দেলোয়ার তালুকদার ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে আমাদের পরিবারকে দীর্ঘ দিন যাবৎ নানা ভাবে হয়রানি করছেন। এই মামলায় আসামী করাও তার উদাহরন। চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদার এলকায় ভূমিদস্যুতায় লিপ্ত থাকে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ কে হয়রানি করে বেড়ায়। তার এ সকল কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যে বা যেসকল পরিবার প্রতিবাদ করবে তিনি তাদেরকে নানা ভাবে হয়রানি করে থাকে।

দেলোয়ার তালুকদর ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী ডালিয়া আক্তারও তার সাথে ঢাকায় রয়েছেন। তার মুঠোফোনে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব বলেন, ডগ্রির ঘটনায় একটি মামলা নথি ভূক্ত করা হয়েছে। ওই মামলায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারা কারা আসামী হয়েছেন তা বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। দুই সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কিভাবে মামলার আসামি হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদীপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের আসামি করা হয়েছে।

বার্তা বাজার/এইচএসএস