অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে উত্তর সিকিমের লোনক হ্রদ ভেঙে হুড়মুড়িয়ে পানি নেমে আসছে তিস্তায়। এর ফলে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তিস্তার পানি। পানি বৃদ্ধিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে তিস্তা চরের মানুষ। এ কারণে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জল কপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুর পৌনে পাঁচটায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ৩৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ মিটার ২৫ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ২টায় একই পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ মিটার ৯০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী,টেপাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম এবং জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শোলমারী ইউনিয়নের চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হওয়ার ফলে প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। তারা এখন বন্যার শঙ্কায় রয়েছেন। চলতি মৌসুমে কয়েক দফায় বন্যা হলেও তা বেশি সময় স্থায়ী ছিল না। মৌসুমের শেষ দিকের এ বন্যায় বসতবাড়ি,আবাদি জমি গবাদি পশুসহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

ডিমলা উপজেলার কালিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মোবারক আলী জানান, সকালবেলা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এমনভাবে পানি বাড়ছে যা বলার বাহিরে। মূহর্তের মধ্যে চরের ধান ক্ষেত তলিয়ে গেল।

ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, একদিকে উজানের ঢল, অন্যদিকে অবিরাম বৃষ্টি হওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। উত্তর খড়িবাড়ী গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

তিস্তা নদী পরিদর্শন শেষে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, উজানে সিকিমের একটি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। ফলে প্রবল বেগে উজান থেকে বিপুল পরিমাণে পানি তিস্তা নদী দিয়ে দ্রুত নেমে আসছে। দ্রুত তিস্তাপাড়ের বাসিন্দাসহ অন্যান্যদের সতর্ক থেকে জানমালসহ নিরাপদ আশ্রয়ের যেতে মাইকিং করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে সবাই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জরুরি প্রয়োজনসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করায় প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে।

পানি বৃদ্ধির বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌল্লা বলেন, উজানে ভারি বর্ষণের কারণে তিস্তাসহ আশেপাশের নদী গুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সতর্কতা জারি করে নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

বার্তাবাজার/এম আই