পদোন্নতির জটিলতা নিরসন, নতুন পদ সৃষ্টি, পে স্কেল সমস্যার সমাধানসহ শিক্ষা ক্যাডারে নানা বৈষম্য দ্রুত নিরসনের দাবি জানিয়েছে পটুয়াখালীর সরকারি কলেজগুলোর শিক্ষকদের সংগঠন পটুয়াখালী জেলা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান না হলে কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সমিতির নেতারা।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রফেসর লাউঞ্জ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারন সম্পাদক পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুল মালেক বলেন, ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, পদোন্নতিতে জটিলতা, নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়া, অর্জিত ছুটি না দেওয়া, নতুন পে স্কেলের সমস্যা সমাধান না হওয়াসহ নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান করতে হবে। না হলে শিক্ষায় কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন তারা।
তিনি বলেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে জনবলের ঘাটতি রয়েছে । তবে শিক্ষা ক্যাডারে প্রাপ্যতা অনুযায়ী কোন পদ সৃজন করা হয়নি। ২০১৪ সালে ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, দীর্ঘ ৯ বছরেও এ পদগুলো আলোর মুখ দেখেনি । ফলে, দিন দিন বাড়ছে শিক্ষক সঙ্কট। এর প্রভাব পড়ছে পুরো শিক্ষাব্যবস্থায়। কারণ, শিক্ষক ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।
অন্যন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতি পেয়ে থাকে। তবে শিক্ষা কাডারে সর্বোচ্চ পদ অধ্যাপক পদটি চতুর্থ গ্রেড হওয়ায় শিক্ষা ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেনা। অধ্যাপক পদটি তৃতীয় প্রেডে উন্নীত করা এবং আনুপাতিক হারে প্রথম ও ২য় গ্রেডের পদ সৃষ্টি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
২০১৫ সালে নতুন পে-স্কেলে সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাডার হচ্ছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা। বিষয়টি সেসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হলে তিনি নতুন পে-স্কেলের মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যাসমূহ সমাধানের নির্দেশ দেন। এতে শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদমর্যাদাসম্পন্ন পদসমূহের মধ্যে ৪২৯টি পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তবে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে মাত্র ৯৮ টি পদ ৩য় গ্রেডে উন্নীত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়। এক্ষেত্রে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকর করা হয়নি
তিনি বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি করা হলেও বিশেষায়িত পেশা হিসেবে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারকে গড়ে তোলা হয়নি। এ পেশাকে গ্রাস করছে অনভিজ্ঞ অপেশাদারা। শিক্ষা ক্যাডারকে অবকাশমুক্ত করা জরুরি। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা ছুটির ফাঁদে পড়েছে। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ভোগ করে। আবার বছরে ৫৫ দিন অবকাশকালীন ছুটি ভোগ করে। তাতে বছরের প্রায় ৫০ শতাংশ সময় ক্লাস বন্ধ থাকে। অন্যদিকে, অর্জিত ছুটি পাওয়ার পক্ষে জোরালো যু্ক্তি থাকার পরও বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
আগামী ২ অক্টোবর সারাদেশে একদিনের কর্মবিরতি পালন করা হবে। সমস্যার সমাধান না হলে ১০,১১ ও ১২ অক্টোবর টানা তিন দিনের কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।
পটুয়াখালী জেলা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ নুরুল আমীন বলেন, অন্যান্য ক্যাডারে চাকরির ৫ বছর পূর্তিতে নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হলেও শিক্ষা ক্যাডারে তা দেওয়া হচ্ছে না। অনেকেই একই বেতনে একই পদে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে কর্মরত আছেন। এতে অনেকে সামাজিকভাবে অমর্যাদাকর অবস্থায় পড়ছেন।
অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর মোঃ মোদাচ্ছের বিল্লাহ, প্রফেসর মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন, অধ্যাপক মোঃ নাজমুল করিম, গাজী জাফর ইকবাল, মোসাঃ সেলিনা আকতার, মোঃ ফারুক হুসাইন, মোঃ মশিউর রহমান,মো. সেলিম হোসেন, ডালিয়া সুলতানা, মোসাঃ সেলিনা আকতার, মোঃ হাসান মিয়া, মোঃ কামরুল হাসান ও মোঃ শাকির হোসেনসহ সহ সমিতির অন্যান্য সদস্যরা এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
বার্তাবাজার/এম আই