পিরোজপুরের নেছারাবাদে নবজাতক দাফনের সাত ঘন্টা পরে বাচ্চার চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র লিখে দিলেন মাসুম বিল্লাহ নামে এক প্যারামেডিকেল ডাক্তার। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) উপজেলার হাসপাতাল সংলগ্ন এ্যাপেক্স হেল্থ ক্লিনিকে বসে ওই ক্লিনিকের কর্তব্যরত ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ বাচ্চার ব্যবস্থাপত্র লিখেছেন। বিষয়টি ২৯ জুলাই (শুক্রবার) রাতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে মানুষের কাছে চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, নেছারাবাদ উপজেলার কৌরিখাড়া গ্রামের ওমর ফারুক তার স্ত্রীর প্রসববেদনা নিয়ে গত বুধবার সরকারি হাসপাতালের নার্স আফিফার তত্ত্বাবধায়নে ওই ক্লিনিকে ভর্তি হন। ক্লিনিকের রেজিষ্টার খাতায় নেছারাবাদ হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার মো: আসাদুজ্জামানের রেফারেন্স লেখান নার্স আফিফা।

এ সময় ওই প্রসূতি মায়ের কোন আলট্রা বা স্বাস্থ্যগত কোন পরীক্ষা না করিয়ে রোগীর নরমাল ডেলিভারি হবে বলে আশ্বস্ত করেন ওই নার্স। রাতে ওই রোগীর অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়ে পড়ে। এতে রোগীর স্বজনরা বিচলিত হয়ে নার্স আফিফাকে ডাক্তার আনতে বলেন। এতে আফিফা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে স্বজনদের বকাঝকা করেন। রাত প্রায় ৩টা ৫০ মিনিটের সময় নার্স আফিফা ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে ক্লিনিকে বসে টানাহেচড়া করে ওই প্রসূতির ডেলিভারি করেন। এতে ওই সময়েই বাচ্চা মারা যায়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে রোগীর স্বজনরা ক্লিনিকের পরিচালক ডাক্তার মাসুম বিল্লাহর উপর চড়াও হয়ে তার কক্ষে ছুটে যান। এসময় ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ তাদের বুঝিয়ে শুনিয়ে মাসহ মৃত নবজাতক বাচ্চার ব্যবস্থাপত্র লিখে ক্লিনিক থেকে তাদের বিদায় করেন।

ওই প্রসূতির স্বামী ওমর ফারুক অভিযোগ করেন, নার্স আফিফা আমাদের ভুলবাল বুজিয়ে নরমাল ডেলিভারির আশায় ২৬ জুলাই ক্লিনিকে ভর্তি করেন। এসময় তিনি আমার স্ত্রীর কোন আল্ট্রা বা কোন স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করিয়ে স্ত্রীর নরমাল ডেলিভারি হবে বলে আমাদের জানান। রাত ৩.৫০ মিনিটের সময় আমার স্ত্রীকে রুমে নিয়ে ডেলিভারি শুরু করেন। এসময় আমার স্ত্রী খুব ডাক চিৎকার দিচ্ছিল। কিছু সময় পর নার্স আফিফা ওই রুম থেকে বাচ্চা নিয়ে বের হয়ে অক্সিজেন রুমে প্রবেশ করে বলেন বাচ্চাটা হার্টবিট কম। এসময় তাকে বিশ্বাস না করে পাশের সরকারি হাসপাতাল থেকে ডাক্তার এনে জানতে পারি আমার বাচ্চা মৃত। তিনি বলেন, নার্স আফিফা অতিলোভে একক কর্তৃত্ব নিয়ে আমার স্ত্রীকে টানহেচড়া করে ডেলিভারি করান। তার টানা হেচড়ায় আমার বাচ্চা মারা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নার্স আফিফা বলেন, তার স্ত্রীর মৃত বাচ্চা হয়েছে। তাহলে মৃত বাচ্চাকে কেন অক্সিজেন দিলেন এমন প্রশ্ন করে পুনরায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন অক্সিজেন দেয়নি। তাছাড়া ডেলিভারির সময় কত বাচ্চা মারা যায়। এতে এমন কি সমস্যা হয়েছে। আসলে আমার পিছনে শত্রু লেগেছে।

ওই ক্লিনিকের পরিচালক ও মৃত নবজাতকের জন্য ঔষধ প্রেসক্রাইবড করা ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ বলেন, বাচ্চাটি মৃত তা আমি জানতাম। তবে ভুলে বাচ্চার মায়ের সাথে মৃত নবজাতকের জন্য ঔষধ লিখেছিলাম। ক্লিনিকে বসে টানাহেচড়ায় নরমাল ডেলিভারিতে নবজাতকের মৃত্যু বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার অজান্তে হাসপাতালের কিছু কিছু নার্স গর্ভবর্তী রোগী এনে নিজেদের তত্ত্বাবধায়নে ডেলিভারি করিয়ে থাকেন। যা খুবই খারাপ।

এ বিষয়ে নেছারাবাদ হাসপাতালের মা ও শিশু বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তার আসাদুজ্জামান জানান, ওই রোগী কোথা থেকে এসেছে, কিজন্য তাকে ভর্তি করানো হয়েছে তা আমাকে ওই নার্স বা রোগীর স্বজনরা কিছুই জানায়নি। আমি কিছু জানিনা।

বার্তাবাজার/রাহা