আর মাত্র একদিন পরেই দেবীদ্বার পৌরসভার নির্বাচন। শনিবার (১৫ জুলাই) রাত ১২টা পর্যন্তই প্রার্থীদের প্রচারণার শেষ সময়। অর্থাৎ আজ মধ্যরাতের পর আর প্রচারণা চালাতে পারবেন না প্রার্থীরা। এদিকে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে মধ্যরাত থেকেই যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি পৌর এলাকায় বহিরাগত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী আজ (শনিবার) মধ্যরাতে প্রচার-প্রচারণা শেষ হবে। প্রচারণা শেষ হওয়ার পর বহিরাগত কেউ নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবে না। বহিরাগতদের ব্যাপারে আজ ১৬ জুলাই থেকে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ১৭ জুলাই নির্বাচনে মেয়র পদে ৮জন, ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ১৮জন ও ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৯জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে।

প্রায়ই ২১ বছর পর এ প্রথম অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন হবে ইভিএমে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৪ ভোট কেন্দ্রের ১২৪টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রার্থীদের দাবি থাকা সত্ত্বেও কমিশননের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় ভোটকেন্দ্র সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য কোন প্রকার সিসি ক্যামেরা থাকছেনা।

এ নির্বাচনে ১৪টি ভোটকেন্দ্রে ৪৪হাজার ৫০৯জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার ৯২৮জন ও পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২২ হাজার ৫৮১ জন।

এদিকে নির্বাচনে যান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক।

অপরদিকে দেবীদ্বারে এমপিসহ নৌকার প্রার্থী এবং ওসির বিরুদ্ধে প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন ৫ মেয়র প্রার্থী।

তাঁদের বিরুদ্ধে হুমকি, হয়রানি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ করছেন তাঁরা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন পাঁচ মেয়র প্রার্থী। অভিযোগকারী মেয়র প্রার্থীরা হলেন এম এ কাইয়ুম ভূঁইয়া (ক্যারম বোর্ড), মো. আবুল কাশেম (নারকেলগাছ), শাহজাহান মোল্লা (ইস্ত্রি), এ বি এম আতিকুর রহমান বাসার (মোবাইল ফোন) ও শরিফুল ইসলাম সুমন (চামচ)।

দেবীদ্বার পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীম, দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধরের বিরুদ্ধে হুমকি, হয়রানি, নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তারা প্রথম থেকেই করে আসছিলেন।

এ ছাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ কাইয়ুম ভূঁইয়া।

লিখিত অভিযোগে তাঁরা বলেন, দেবীদ্বার থানা-পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তারা রাতের আঁধারে অভিযানের নামে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাদের এমন ভূমিকা অব্যাহত থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ব্যাহত হবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ কাইয়ুম ভূঁইয়া সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্থানীয় এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল তাঁর বনকুট বাড়িতে আমার কর্মীদের ডেকে নিয়ে আমার পক্ষে কাজ না করতে চাপ প্রয়োগ করেছেন। এটি নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

কাইয়ুম বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে ৫০টির বেশি নির্বাচনী কার্যালয় বানিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী এলাকার বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের প্রচারণায় বাধা ও হামলা করছেন। বারেরায় নির্বাচনী গণসংযোগ করতে গেলে নৌকার প্রার্থীর বহিরাগত কর্মী-সমর্থকেরা আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। প্রাণ বাঁচাতে আমাকে একটি ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়, না হলে তারা আমাকে মেরে ফেলত।

এ সময় আমার তিন কর্মীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। গত মঙ্গলবার রাতেও আমার দুই কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন আমাদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দিচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

দেবীদ্বার থানার (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর অসুস্থ থাকায় দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) খাদেমুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে পৌর এলাকায় কোনো আসামি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কোনো অভিযান বা গ্রেপ্তার নাই, হয়রানি নেই। নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ রাখতে আমরা কাজ করছি। তাঁদের অভিযোগ সঠিক নয়।

বার্তাবাজার/রাহা