‘নির্বাচনের পরিবেশ এখনো নেই’, ‘শংকায় আছি, ভোট দিতে পারবো কিনা’, ‘আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি’, ‘প্রার্থীই যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?’

কুমিল্লার দেবীদ্বারে পৌর নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর থেকেই পৌরসভার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই সহিংসতা নির্বাচনী পরিবেশের ওপর কি প্রভাব ফেলছে, ভোটাররা কতটা উদ্বেগ বোধ করছেন – এসব প্রশ্ন নিয়ে কয়েকজনের সাথে কথা বলে শোনা গেল এরকমই কিছু উত্তর।

গত ২৬ জুন সোমবার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারাভিযান শুরু হতে না হতেই – এ পৌরসভার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রার্থীদের গণসংযোগে আক্রমণ, গাড়িবহরে হামলা, ভাংচুর-সংঘর্ষ ইত্যাদি ঘটনা ঘটছে। সরকার দলেরও বেশ কয়েকজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতাও এসব হামলায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সু-দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর পর উৎসবমুখর একটা নির্বাচনের যে আশা ভোটারদের ছিল-এসব হামলার খবরে কি ভোটাররা উদ্বিগ্ন? কতটা নিরাপদ বোধ করছেন তারা এই পরিস্থিতিতে?
জানতে কথা বলেছিলাম বেশ কয়েকজনের সাথে।

পৌরসভার বারেরা এলাকার ভোটার রুবাইয়া শারমীন আখতার। পেশায় গৃহিণী। আর কয়েকদিন পরেই নির্বাচন, তাই ভোটার হিসেবে নিজের ভোটটা দেয়ার উৎসাহ ছিল তার মধ্যে।

কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই যেভাবে প্রার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা হচ্ছে তার খবর শুনে তিনি বলছেন, তিনি আতঙ্কিত বোধ করছেন।

“এখন যে অবস্থা সেটাতে করে যেকোন সময় একটা নাশকতামূলক অবস্থা তৈরি হতে পারে। তাই ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি” – বলছেন এই নারী ভোটার।

রুবাইয়া শারমীন আখতার বলছিলেন, “রাজনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভাল না সেটা আমরা জানি এবং দেখতে পাচ্ছি। এই ক্ষেত্রে আমরা ভোট দিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে পুরুষ অভিভাবক রয়েছে তারা সবসময় চায় যেন আমরা একটা নিরাপদ জায়গায় থাকি।

পৌরসভার মরিচাকান্দা গ্রামের আরেকজন নারী ভোটারও বলছিলেন, পরিবার থেকেই তাদের এখন একটা সতর্কতার মধ্যে থাকতে বলা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সহিংসতা থামাতে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

তিনি বলছিলেন “অন্তত আমরা নিরাপত্তার সাথে বাইরে, রাস্তায় বের হতে পারতাম। কিন্তু এখন আমাদের শোনার মত কেউ নেই। মেয়েরা যে রাস্তায় বের হলে বিপদে পড়তে পারে সেটা চিন্তা করার মত কেউ নেই। এক্ষেত্রে পরিবার থেকেই একটা বাধার মুখে পড়ছি”।

প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা এবং হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রার্থী পর্যন্ত-সবাই এরকম হামলার শিকার হচ্ছেন।

কথা হয় পৌর শহরের কয়েকজন ভোটারের সাথেও। নাম প্রকাশ না করা একজন ভোটার বলছিলেন, নির্বাচনের দিন ভোট দিতে যেতে পারবেন কীনা সেটা নিয়ে তার মনে এখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

“ভোট তো দেয়ার মত কোন পরিবেশ নেই। আর যদিও পরিবেশ থাকে-সেক্ষেত্রে ইভিএমের বাটন তাদের সামনে চাপতে হবে। আর যদি তারা (রাজনৈতিক দলের নেতারা) মনে করে এই লোকটা আমার ভোট দেবে না তাহলে সে টার্গেটে থাকে। তার গতিবিধি, চলাফেরা সব টার্গেট করা হয়। আমরা সাধারণ ভোটার যারা তারা তো আতঙ্কের মধ্যে আছি” – বলেন এই ভোটার।

প্রচারণা শুরুর পর থেকেই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এমএ কাইয়ুম ভূঁইয়া ও ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শিশিরসহ বেশ কয়েকজন নেতার প্রচার মিছিল বা গাড়িবহরে দফায় দফায় হামলার খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।

পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের একজন ভোটার বলছিলেন – যদি প্রার্থীদের ওপর এভাবে দফায় দফায় হামলা হয় আর তার কোন প্রতিকার না হয়, তাহলে সাধারণ ভোটারদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কোথায়?

তিনি বলছিলেন, “বর্তমান যে পরিবেশ আছে সেই পরিবেশ থাকলে তো আমরা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবো না। এখনো পরিবেশ সৃষ্টি হয় নি ভোট দেয়ার মত। আমরা একটা আতঙ্কের মধ্যে আছি।

“যারা রাজনৈতিক কর্মী, নেতা, প্রার্থী – তারাই মার খাচ্ছে, আর আমরা সাধারণ মানুষতো কেন্দ্রেই যেতে পারবো না” – বলেন নাম-প্রকাশ-না-করা এই ভোটার।

নির্বাচনের পূর্বে এই ধরণের হামলা এবং সহিংসতার ঘটনা ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছিলেন একজন জেষ্ঠ সাংবাদিক ও এ পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এবিএম আতিকুর রহমান বাশার।

তবে এবারের নির্বাচনের আগে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ফলে যে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবার কথা – সেটা অনেকটাই উবে গেছে ভোটারদের মন থেকে।

তাদেরকে আস্থায় আনার জন্য বা এই সব হামলা সহিংসতা ঠেকাতে নির্বাচনের কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু করার আছে কীনা?

এই বিষয়ে জানতে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি। তবে কয়েকদিন আগে রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম বলেন, আচরণ বিধিসহ সহিংসতার ঘটনার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই কিছু ব্যবস্থা নিয়েছেন, এবং প্রক্রিয়া অনুযায়ী অভিযোগগুলো তদন্ত করেই ব্যবস্থা নেবেন।

বার্তাবাজার/এম আই