কুমিল্লার দেবীদ্বারে প্রায়ই ২১ বছর পর এ প্রথম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পৌর নির্বাচন। এ নির্বাচনে মেয়র পদে দলের একক মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইমলাম শামীমকে নৌকা প্রতিক নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে দেবীদ্বার পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এরপর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ১৩ জন ফরম সংগ্রহ করেন। পরবর্তী সময়ে জ্যেষ্ঠ নেতাদের টপকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তরুণ নেতা সাইফুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পান। মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা সাইফুলকে সমর্থক দেওয়ার কথা জানালেও আবুল কাশেম ও কাইয়ুম ভূঞা ভোটের মাঠে থেকে যান। গত ২৬ জুন তাঁরা প্রতীক বরাদ্দ পান। এর পর থেকে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অলিগলিতে তাঁরা লিফলেট বিতরণ করছেন। পথসভা করছেন। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন থেকে দুই বিদ্রোহী প্রার্থীকে সরে যেতে হবে। দল থেকে একই পদে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি কোনো ভালো খবর নয়।

আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেবীদ্বারে আওয়ামী লীগের তিনটি পক্ষ আছে। পক্ষ তিনটি হলো কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী। আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারী। কনিষ্ঠ ব্যক্তিকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা ক্ষুব্ধ। তবে তাঁরা বিষয়টি প্রকাশ করছেন না।

তাঁরা আরও বলেন, সাইফুলের বয়স কম। আবুল কাশেম ও কাইয়ুম ভূঞা দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ অবস্থায় অভিজ্ঞ এ দুই নেতাকে সাইফুল কীভাবে ভোটের ময়দানে সামলাবেন, তা-ই দেখার বিষয়।

মেয়র প্রার্থী আবুল কাশেম বলেন, ২১ বছর ধরে নির্বাচন করার অপেক্ষায় ছিলাম। বিলুপ্ত দেবীদ্বার সদর ইউনিয়নের সর্বশেষ চেয়ারম্যান ছিলাম আমি। নির্বাচন করার জন্য ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। বহিষ্কারকে ভয় পাই না। বয়স হয়েছে, নির্বাচনে আছি, থাকব। দেবীদ্বারে দলটাকে এত বছর গুছিয়ে রেখেছি। হামলা-মামলার শিকার হয়েছি।

৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ কাইয়ুম ভূঞা বলেন, বহিষ্কার ও চাপকে ভয় পাই না। নির্বাচন করবই। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। আঞ্চলিক ভোট। পাড়া-মহল্লার ভোট। ভোটে আমি জিতব।

নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বুঝিয়ে-শুনিয়ে এমনকি বহিস্কারের পত্র ধরিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা।

বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়িতে বিপাকে আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে ওয়ার্ডের অলি-গলিতে রাত-দিন প্রচারণা চালিয়ে দল সমর্থিত প্রার্থীর গলার কাঁটা হয়ে উঠেছেন নির্দেশ ভঙ্গকারীরা। ফলে বিএনপি নয়, নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাই বিজয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ক্ষমতাসীনদের।

বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমীন বলেন, ‘আমরা এখনো চেষ্টা করছি তবে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যদি কেউ নির্বাচনে অংশ নেন তাহলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্র আরো ব্যবস্থা নেবে। বিদ্রোহীদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিগগির আলোচনা করে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বার্তাবাজার/রাহা