কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীতে ইজারক বহির্ভূত স্থান থেকে বালু লুটের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে উপজেলা প্রশাসন। ধলাই নদীর দক্ষিণ অংশে মেঘারগাঁও মৌজায় স্টিল বডি নৌকায় লিস্টার মেশিন দিয়ে লিজকৃত সীমানার বাইরে থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র, এমন তথ্যের ভিত্তিতে সকাল সারে ১১টার সময় উপজেলা প্রশাসনের এই অভিযান পরিচালিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজংয়ের নেতৃত্বে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিল্লোল রায় অভিযানে অংশ নেন।

অভিযানের খবর আগেই টের পেয়ে যায় বালু উত্তোলন চক্রের সদস্যরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা প্রশাসনের অভিযান ধলাই দক্ষিণ এলাকায় রওয়ানা হওয়ার সাথে সাথে সেই খবর পেয়ে সটকে পড়ে তারা। অভিযানের আধা ঘন্টা পূর্বেও যেখানে শত শত নৌকা বালু লোড নিচ্ছিল, সেখানেই মাত্র আধা ঘন্টা পরে শুনশান নীরবতা।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীপাড় ঘেষাঁ দক্ষিণ ঢালারপাড় গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করে শত শত স্টিল বডি নৌকা বালু ভর্তি করছিল। বালু উত্তোলনে ব্যস্ত কয়েকশত লিস্টার মেশিন। ৭০/৮০ ফুট পাইপ দিয়ে গভীর গর্ত করে সেই লিস্টার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছিলো। এর কয়েক গজ দূরে শত শত গ্রামবাসী দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রত্যেকের মুখে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছিলো। চোখের সামনেই পৈতৃক ভিটা থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরেই গভীর গর্ত খনন করছে বালুখেকোরা। ফলে হুমকির মুখে পড়ে দক্ষিণ ঢালারপাড় গ্রাম। যন্ত্রদানব লিস্টার মেশিনের ভয়ঙ্কর শব্দ আর নৌকার ধাক্কায় সৃষ্ট ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে ঘনবসতিপূর্ণ দক্ষিণ ঢালারপাড় গ্রাম। এভাবে চলতে থাকলে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বিলীন হবে দক্ষিণ ঢালারপাড় গ্রামের শত শত বসত ভিটা। ধলাই নদীর মালিকানা দাবি করে প্রতি ঘনফুট বালুতে ৫-৬ টাকা করে দৈনিক ৫০-৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চাঁদাবাজ চক্র। প্লট হিসেবে বিক্রিও হচ্ছে ধলাই নদী।

এদিকে গ্রাম রক্ষার স্বার্থে অবৈধ বালুখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে দক্ষিণ ঢালারপাড় গ্রাম রক্ষা পরিষদ নামে একটি নতুন সংগঠন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সংগঠনের এক নেতা জানান, গ্রাম রক্ষার স্বার্থে সংগঠনটির যাত্রা হতে যাচ্ছে। ইদের পরে এর কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই নেতা জানান, গ্রামের কিছু দুষ্কৃতিকারী লোক বালুখেকো চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে দক্ষিণ ঢালারপাড় গ্রামের ভেতরে বালু উত্তোলন করছে। গ্রাম রক্ষায় সংগঠনের কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে সুশীল সমাজ ও সাংবাদিক মহলের সহযোগীতা কামনা করেন সেই নেতা।

আব্দুল আহাদ নামে এক যুবক জানান, প্রশাসনের এসব অভিযান বালুখেকোদের কোনো প্রভাব ফেলছে না। কারণ অভিযানের আগেই তারা খবর পেয়ে নিরাপদে সটকে পড়ে। প্রশাসন এসে ইজারাবহির্ভূত স্থানে নৌকা খুজে পায় না। দক্ষিণ ঢালারপাড় গ্রাম রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনকে অভিযান পরিচালনা না করে একটি স্থায়ী টহল টিমের প্রস্তাব করেন সেই যুবক। তিনি আরও জানান, গ্রামের সামনে স্থায়ীভাবে একটি টহলটিম বা টহল বক্স বসানো হলে গ্রামটি রক্ষা করা সম্ভব হবে।

অভিযানের বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, আমরা খবর পেয়ে ছুটে গেছি। তবে সেখানে কোনো নৌকা পাওয়া যায় নাই। অবৈধ বালুখেকোদের বিরুদ্ধে আমাদের অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙ্গনের পর তা সরকারি সম্পত্তিতে পরিণত হয়। এখানে কারো মালিকানা দাবি করার সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তৌফিক আহমদ বলেন, কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি সরকার ইজারা দেয়নি। জমির মালিকানা দাবি করে কোনো ব্যক্তি বা মহলের চাঁদা উত্তোলনের কোনো সু্যোগ নেই। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বার্তা বাজার/জে আই