নাটোরের গুরুদাসপুরে সরকারি বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের অফিস কক্ষের সামনে রাখা শক্তিশালী বোমাটি নিস্ক্রীয় করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজমের বোমা নিস্ক্রীয়কারী ইউনিট।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বোমাটি পাহাড়ায় রেখে ১৮ ঘন্টার প্রচেষ্টায় শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে বোমাটি নিস্ক্রীয় করার মাধ্যমে ওই অভিযান শেষ হয়। তবে বোমাটি কতটা শক্তিশালী ছিল তা জানাযায়নি।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ বলেন, কলেজে পাওয়া বোমাটি শক্তিশালী ছিল। বোমাটি বস্তায় মোড়ানি একটি সুটকেচের মধ্যে ছিল। মূলত তিনটি পেট্টোল বোমা, তিনটি ককটেল এবং প্লাস্টিকের জারে রাখা বিষাক্ত কেমিকেল জাতীয় পদার্থের সমন্বয়ে বোমাটি তৈরি করা হয়েছিল।

এর আগে শনিবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ পাহারা বসানো হয়। পরে দুপুর তিনটার দিকে র‌্যাব-৫ এর বোমা নিস্ক্রীয়কারী দল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পার্সেলের বস্তায় শক্তিশালী বোমা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে। কিন্তু তাদের কাছে শক্তিশালী বোমা নিস্ক্রীয়করণ যন্ত্রপাতি না থাকায় র‌্যাব সদর দপ্তরের সহযোগিতা চাওয়া হয়। রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজমের ৫ সদস্যের ইউনিটটি ঘটনাস্থলে এসে বোমা নিস্ক্রীয় কার্যক্রম শুরু করে। টানা আড়াই ঘন্টা চেষ্টার পর বোমাটি নিস্ক্রীয় করে অভিযান শেষ করা হয়।

অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম সাইদ জানান, থানার অদূরে তার কলেজটির ক্যাম্পাস। শনিবার সকালে অফিস কক্ষের সামনে গিয়ে তিনি বিশেষ বার্তা সম্বলিত একটি বস্তা দেখতে পান। বস্তার গায়ে বিশেষ বার্তা থাকায় বিষয়টি নিয়ে তার সন্দেহ হয়। পরে তিনি পুলিশে খবর দেন।

তিনি বলেন, কলেজ নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে মামলা চলছে। কিছুদিন আগে বোমা মেরে কলেজটি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন প্রতিপক্ষের লোকজন। মূলত সে কারণেই তার অফিস কক্ষের সামনে আমের বস্তায় বোমা রেখেছিল প্রতিপক্ষের লোকজন। এখন তিনি প্রাণ শংসয়ে আছেন।

কলেজ, পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, অধ্যক্ষের অফিস কক্ষের দরজার সামনে সাদা রঙের একটি বস্তা পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল ‘আমরুপালী ৩০ কেজি। প্রাপক প্রিন্সিপাল, বঙ্গবন্ধু কলেজ, গুরুদাসপুর নাটোর। তাতে অধ্যক্ষের মোবাইল নম্বরও লেখা ছিল।’ খবর পেয়ে সকাল থেকে কলেজ ক্যাম্পাসটিতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয় ওই বস্তা। বস্তাটিকে ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। দিনভর কলেজ ক্যাম্পাসে উৎসুখ মানুষ ভিড় জমাতে থাকে।
এদিকে এলাকায় বোমা আতংক ছড়িয়ে পড়ায় শ্রেণি পরীক্ষা স্থগিত করে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রোববার কলেজের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোনোয়ারুজ্জামান জানান, কলেজে বোমা রাখার বিষয়ে এখানো কোনো মামলা হয়নি। বিষয়টি গভিরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের করবেন তিনি।
সিংড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আক্তারুজ্জামান জানান, নিস্ক্রীয় বোমাটির আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার পর জানাযাবে এটি কতটা শক্তিশালী ছিল।

এর আগে ২০২১ সালে ১২ জুলাই গুরুদাসপুর উত্তরনাড়িবাড়ি মোড়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় চারটি তাজা বোমা পাওয়া যায়। পরে ঢাকা থেকে আসা র‌্যাবের বোমা নিস্ক্রীয়কারী দল তা নিস্ক্রীয় করে।

বার্তা বাজার/জে আই