মাদারীপুরের শিবচরে আড়িয়াল খা নদে অবৈধ বালু ঊত্তোলনের অভিযোগে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত ৯ জনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে কমিশন।

রবিবার উপজেলার আড়িয়াল খা নদে এ অভিযান চালান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড.মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তবে রেল বিভাগ দাবী করে রেল সেতুর নদী শাষন বাধের নির্মান কাজে বাধাগ্রস্থ হয়েছে এ অভিযানে৷

সরেজমিনে শিবচর থানা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ অভিযানে আড়িয়াল খা নদের রেল সেতুর নিচে তীর রক্ষা কাজের জন্য ব্যবহৃত বার্জ থেকে ৫জন কর্মচারী এবং একটি ড্রেজার থেকে ৪জন কর্মচারীকে আটক করা হয়। সংশ্লিষ্টদের দাবী আড়িয়াল খা নদের উভয় পাড়ে সেতুর নিচে ব্লক ডাম্পিং করার জন্য একটি বার্জ আনা হয়। বেশ কিছুদিন ধরে এই রেল সেতুর নিচের নদীর তীর রক্ষার কাজ শুরু করা হয়। উভয় পাড়ে প্রায় ২শত ২৫মিটার স্থান ব­ক ডাম্পিং করে পাথর দিয়ে নদী শ্সান কাজ করা হবে। এ অভিযানের কারনে রেল সেতুর তীর রক্ষা কাজ বিঘ্নিত হবে বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের।

সুত্র আরো জানায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার আড়িয়াল খা নদের হাজি শরীয়ত উল্লাহ সেতু সংলগ্ন ভাঙ্গা- ঢাকা রেললাইনের রেলসেতুর নীচের আড়িয়াল খা নদে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রবিবার অভিযান চালানো হয়। এসময় ড্রেজারের কাজে নিয়োজিত ৯ শ্রমিককে আটক করে পুলিশ।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সানাউল কাদের খান, শিবচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াজুল ইসলামসহ শিবচর থানা পুলিশ ও নৌপুলিশের টিম যৌথ অভিযান চালায়।

ড্রেজিংএ কর্মরত চায়না প্রকৌশলীদের দোভাষী আ: আজিজ জানান, অভিযানে একটি বার্জ ও একটি ড্রেজার থেকে ৯জন কর্মচারীকে আটক করায় সেতু রক্ষা কাজে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। এসময় নদী শাষন বাধের কথা বারবার বলা শর্তেও তারা কোন কথাই শোনেনি৷ রেল প্রজেক্টের কাজে এ ধরনের অভিযানে আমরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছি।

এদিকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সহকারী নদী শাসন বিশেষজ্ঞ বুলবুল আহমেদ জানান, রেললাইনের সব সেতুতেই এভাবে নদী শাষন বাধ নির্মান করা হয়েছে। আড়িয়াল খা রেল সেতুর নিচে নদীর গতি পথ সঠিক রাখার জন্য বালুর বস্তা ডাম্পিং করে সি.সি ব­ক দ্বারা নদী শাসনের কাজ করা হয়। আড়িয়াল খা নদের এখানের উভয় পাড়ে ১৫মিটার পর্যন্ত গভীর করা প্রয়োজন। এ কাজের জন্য গত ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট কর্ত্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়া ছিল। গত ৫ জুন থেকে এ কাজ শুরু হয়। কিন্তু বর্তমান সেতু রক্ষার জন্য জিরো মিটার থেকে ১৫মিটার পর্যন্ত ড্রেজিং করে গভীরতা সৃষ্টি করতে হয়। যে কারণে এখানে ড্রেজার লাগাতে হয়েছে। যেমনটি আমরা পদ্মা সেতুর বেলায়ও নদীর পাড় ড্রেজিংসহ বালুর বস্তা ডাম্পিং করে ব্লক দ্বারা নদী শাসন কাজ করেছি। তবে নদী রক্ষা কমিশনের এই অভিযানে আমাদের কাজের বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল কাদের খান জানান, সেতুর উভয় দিকের ১ কিলোমিটারের মধ্যে কোন রকম ড্রেজিং করে বালু বা মাটি উত্তোলন করার নিয়ম নেই। তবে রেল সেতুর তীর রক্ষার জন্য নদী শাসনের প্রয়োজনে সেতু কর্তৃপক্ষ নদী গভীর করে বস্তা ডাম্পিং করে ব্লক দিয়ে কাজ করতে পারে। আমরা অভিযান চলা কালে আমরা জানতে পেরেছি। এটা রেল সেতু কক্তৃপক্ষের কাজ।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী জানান, নদীতে যেকোন স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে মাটি বা বালু উত্তোলন করার কোন নিয়ম নেই। এটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে হাজী শরীয়ত উল্লাহ সেতু ও পার্শ্ববর্তী রেল সেতুর নিচে অনুমোদনহীন ভাবে একটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার সময় কাজে নিয়োজিত ৯ শ্রমিককে আটক করা হয়। তাদের শিবচর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বার্তা বাজার/জে আই