রমজান মাস এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ। রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে বিনা লাভে পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের মুদি ব্যবসায়ী ওমর ফারুক খান। পুরো রমজান জুড়ে চলবে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ।

ওমর ফারুকের ‘আব্দুল্লাহ ভ্যারাইটিজ’ স্টোরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওমর ফারুক তার দোকানে ১২ রকমের পণ্য বিনালাভে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তিনি প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি করছেন ১০১ টাকায়, খেসারি ডাল ১১৬ টাকায়, চিড়া ৬০ টাকায়, চিনি ১৩৬ টাকায়, আখের গুড় ১১১ টাকায়, বেসন ৮৫ টাকায়, মুড়ি ৭০ টাকায়,সয়াবিন তেল ১৬০ টাকায়, লাচ্ছা সেমাই ১৩৬, সলা সেমাই ৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।

পাশাপাশি স্টার শিব দুধ এবং খেজুরও লাভ ছাড়াই বিক্রি করছেন ওমর ফারুক। ক্রেতাদের সুবিধার্থে স্টোরে পণ্যের মূল্য তালিকাও সাটিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ওমর ফারুক জানান, রমজান আসতেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। অথচ রমজানে এলে মধ্যপ্রাচ্যে সব খাবারের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। তাদের এমন উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে রমজান উপলক্ষে বিনা লাভে পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য আগামী রমজানেও এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চান এ ব্যবসায়ী।

তিনি আরও বলেন, মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিতে চাই। বার্তাটি হলো—এই একটি মাস ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের স্বার্থে কম লাভে পণ্য বিক্রি করতে পারেন এবং ইচ্ছা করলেই সেটি সম্ভব।

বিনা লাভে রমজানের পণ্য বিক্রি করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সবার নজর কেড়েছে। ইতিমধ্যেই পেয়েছেন ব্যাপক সারা। দূর দূরান্ত থেকেও এখানে পণ্য কিনতে এসে মধ্যবিত্ত ও অসহায়রা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এলাকাবাসী। অন্যান্য বড় ব্যবসায়ীদেরও এভাবে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সবাই।

স্থানীয়রা মনে করেন ওমরের মত অন্য ব্যবসায়ীরাও যদি রমজান মাসে এভাবে ছাড় দিতেন তাহলে মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ এই রমজানে পণ্য কিনে কিছুটা স্বস্তি পেতেন।

পন্য কিনতে আসা বাচ্চু মাদবর বলেন, ‘ফেসবুকে দেখে আসছি। দুই লিটার তেল আর গুড় কিনলাম। কত কমে কিনলাম সেটা বড় না, এই ছেলে যে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে এই চিন্তাটা করছে, এটাই ভালো লাগছে। বাজারের অবস্থা তো ভালো না। মানুষ বড় কষ্টে আছে।’

স্কুল শিক্ষক সুব্রত বলেন, এই তরুণের কাছ থেকে ব্যবসায়ীদের শেখার আছে। এটি খুব ভালো উদ্যোগ। ব্যবসায়ীরা তো সারা বছরই লাভ করেন, একটা মাস কম লাভ করলে সাধারণ মানুষ বাঁচে।

পণ্য কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম ফকির বলেন, ‘যেখানে ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সিন্ডিকেট করে সব পণ্যের দাম বাড়াতে সেখানে ব্যতিক্রম ওমর ফারুক। তিনি কিনা দামে চিনি, তেল, ছোলাসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করায় আমরা কম দামে কিনতে পারছি। তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না।’

জতিন দাস নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। মজিবুর রহমান দুনিয়াতে কি পাবে জানি না, তবে ঈশ্বর তাকে অবশ্যই পরের জন্মে পুরস্কৃত করবে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম মন চাইলেও সব কিনতে পারি না। এ দোকানে এসে খুবই ভাল লাগছে। কম দানে অনেকভকিছুই কিনতে পারলাম।

শরীয়তপুর ভোক্তা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজী বলেন,ওমর ফারুক রমজান মাসে কম মূল্যে মানুষের জন্য নিত্যপণ্য বিক্রির যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি প্রশংসার দাবি রাখে। আমারা তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই এবং অন্য সকল ব্যবসায়ীদের এরোকম ভালো উদ্যোগে এগিয়ে আসা উচিৎ।