শরীয়তপুরের ডামুড্যায় ওজনে চাল কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) একটি বিক্রয় কেন্দ্রে। ন্যায্য মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে এসে ওজনে চাল কম পেয়ে ভূক্তভোগীরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে তাদেরকে শান্ত করতে বয়স্ক এক কর্মচারীকে সকলের সামনেই জুতাপেটা করেছেন ডিলার। বিষয়টি গণমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়লে যারা ওজনে কম পেয়েছে, উপস্থিত এমন কয়েকজনকে পরিপূর্ণ করে চালসহ অন্যান্য পণ্য দেওয়া হয়েছে। যদিও ততক্ষণে ভূক্তভোগী অধিকাংশ ব্যক্তিই কম চাল নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) সকালে উপজেলার দারুল আমান ইউনিয়ন পরিষদের টিসিবির পণ্য বিক্রয় কেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটেছে।ফ্রেন্ডশিপ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান টিসিবির পণ্য বিক্রিয় করে দারুল আমান কেন্দ্রে। কম চাল দেওয়ার কারণে উত্তেজিত ভুক্তভোগীদের শান্ত করতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক আব্দুর রশিদ মাদবর তার কর্মচারী ইকবাল হোসেনকে জুতাপেটা করেছেন ।

ভূক্তভোগী ও ডিলার সূত্রে জানা যায়, অতিদরিদ্রদের জন্য সরকার ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনী জিনিসপত্র ক্রয়ের সুযোগ করে দিয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে। বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ন্যায্য মূল্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে সাধারণ মানুষ। দারুল আমান কেন্দ্রে প্রতি মাসে এক হাজার ৯২০ জন ব্যক্তি ন্যায্য মূল্যে পণ্য কেনার সুবিধা পেয়ে থাকেন। বৃহস্পতিবার দারুল আমান ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে এসব পণ্য ক্রয় করতে আসা ব্যক্তিরা জানান, ৫২৫ টাকা মূল্যে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ১ কেজি ছোলা ও ২ লিটার সয়াবিন তেল দেওয়ার কথা। কিন্তু সকাল ৯ টা থেকে দারুল আমান বিক্রয় কেন্দ্রে ৫ কেজি চালের পরিবর্তে কাউকে ৪ কেজি আবার কাউকে সাড়ে ৩ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। চাল দেওয়ার সময় নিয়ম অনুযায়ী একজন ট্যাগ অফিসারের বিক্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু কেন্দ্রটিতে পণ্য বিক্রির সময় কোনো অফিসার ছিলেন না। এসময় ওজনে কম দেওয়ার কারণে ভূক্তভোগীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বিষয়টি জানিয়ে কেন্দ্রটিতে বিক্রয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা ডিলার আব্দুর রশিদ মাদবরকে খবর দেন। পরে ডিলার এসে ঘটনার সত্যতা পেয়ে উপস্থিত ভূক্তভোগীদের শান্ত করতে ইকবাল হোসেন নামে এক কর্মচারীকে চাল ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগে জুতাপেটা করেন। এরপর যারা চাল কম পেয়েছেন, তাদেরকে মেপে মেপে পরিপূর্ণ ৫ কেজি চাল দেওয়া হয়। যদিও ততক্ষণে অধিকাংশ লোকই কম চাল নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। চাল কম দেওয়া ও বয়স্ক কর্মচারীকে জুতা দিয়ে পেটানোর বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি করতে নিষেধ করেন ডিলার আব্দুর রশিদ মাদবর।

আবুল হোসেন হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি বলেন, ডিলারের নির্দেশেই চাল কম দেওয়া হয়েছে। উত্তেজিত ভূক্তভোগীদের শান্ত করেত নিজের দোষ ঢাকার জন্য তিনি কর্মচারীকে মারধর করেছেন। বয়স্ক একজন লোককে এভাবে সবার সামনে জুতা দিয়ে পেটানো খুবই অন্যায়। আমি চাই তদন্ত করে ডিলারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হউক।

স্বপন বেপারী নামে পূর্ব নান্দ্রা গ্রামের একজন বলেন, আমরা গরীব মানুষ বলেই টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছি। কেনার পর দেখি ৫ কেজি চালের জায়গায় ৮০০ গ্রাম চাল কম। এনিয়ে অভিযোগ করায় ডিলার এসে একজনকে মারধর করেছেন। তার ভয়ে আমরা কথাও বলতে পারি না।

একই অভিযোগ উত্তর ডামুড্যা এলাকার কামাল ও স্বপন খানের। তারা বলেন, আমরা এক সঙ্গে দুইটি প্যাকেজ নিয়েছিলাম। চালের ওজন কম বলে সন্দেহ হলে মেপে দেখি ২ কেজি কম। বিষয়টি ডিলারকে জানিয়েছিলাম। জানানোর পরে তিনি আমাদের উল্টো গালাগালি করেছে। চাল কম দেওয়া ও জুতা পেটা করার বিষয়ে জানার জন্য বিক্রির কর্মী ইকবাল হোসেনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। জুতা পিটুনি খাওয়ার পরে ডিলার আব্দুর রশিদ মাদবরের নির্দেশে তিনি কেন্দ্র থেকে চলে গেছেন।

জুতা দিয়ে কর্মচারীকে পেটানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডিলার আব্দুর রশিদ মাদবর বলেন, আমার মাথাটা একটু গরম ছিলো। হাটবার হওয়ায় ব্যস্ততার কারণে আমি টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্রে থাকতে পারিনি। হঠাৎ খবর পেয়েছি, ক্রেতারা ওজনে চাল কম পেয়েছে। এরপর আমি বিক্রয় কেন্দ্রে এসে কর্মচারী ইকবাল হোসেনকে জুতা দিয়ে দুইটা পিটান দিয়েছি। গুদাম থেকে পণ্য আনাসহ সকল কার্যক্রমই সে করে থাকে। হয়ত ইকবাল নিজেই চাল সরিয়েছিল। গুদাম থেকে আনা চাল ওজনে ৩১ কেজি কম ছিল। আমি ওই চাল বাজার থেকে কিনে এনে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছি। লোকজনের সামনে বয়স্ক একজনকে এভাবে পেটানো ঠিক হয়েছে কি না। ট্যাগ অফিসার উপস্থিত ছিল কি না এবিষয়েও কিছু বলতে রাজি হোননি।

দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ওবায়দুর রহমান (ডামুড্যা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা) বিক্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন কি না জানার জন্য তাকে মোবাইল করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর বারবার তাকে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিষয়টি নিয়ে দারুল আমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুমিনুল হক মিন্টু শিকদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ওজনে চাল কম দেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। বয়স্ক একজন কর্মচারীকে সবার সামনে জুতা দিয়ে পেটানো অন্যায়। আমি অসুস্থ্য, এই বিষয়টি জানতাম না। যদি ডিলার এমন কোনো কাজ করে থাকেন, তাহলে সেটা গুরতর অন্যায়।

বিষয়টি নিয়ে ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবাশ্বর আলম বলেন, চাল কম দেওয়ার ঘটনায় কর্মচারীকে জুতা দিয়ে পেটানো বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া চাল কম দেওয়ার সুযোগ নেই।