২০০৮ সালে সাগর মাহমুদ ঢাকায় থাকার পর যখন বাড়িতে আসতো তখন তার মা মৃত্যু (মাহিনুর বেগম) দুধ খাবার জন্য গরু কিনতে বলে। তখন প্রথমে তার মায়ের দুধ খাবার জন্য দুটো আস্ট্রেলিয়ান গাভী ক্রয় করেন। গাভি দুটো প্রথমে দুধ ভাল দিলেও পরে দেয়া শুরু করে। তাই তার মায়ের জন্য আরো দুটো গাভী কিনেন৷ আর সেখান থেকেই আস্তে আস্তে শুরু। পরে সেখানে তার গাভীর সংখ্যা দাড়ায় প্রায় ত্রিশটিরও বেশি। তখন তিনি এই ফার্মের নাম দেন মেসার্স সাগর ডেইরি ফার্ম। সেখান থেকেই কর্মসংস্থান হয় প্রায় ১০/১২ জন পুরুষের। সাগর মাহমুদ কালিকাপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বহালগাছিয়া গ্রামের মৃত্যু আব্দুল ফকিরের ছেলে। শুরুতে দুটো গাভী দিয়ে শুরু করলেও এখন সাগরের বছরে আয় প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা।
সাগর মাহমুদ তার ডেইরি ফার্মের দুধ দিয়ে রসমালাই, মিষ্টিসহ বিভিন্ন রসালো পণ্য বিক্রি করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। নিজের বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা দেখিয়ে হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী ও একজন সফল উদ্যোক্তা। তবে তাকে দেখে এখন অনেকেই ডেইরি ফার্ম তৈরিতে উদ্ভুদ্ধ হয়েছেন। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় বাড়তি দুধ থেকে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যাচ্ছে তার দুধের তৈরি পণ্য।
সাগর মাহমুদ জানান, মায়ের দুধ দিয়ে খাবার খেতে ভাল লাগতো। তাই প্রথমে দুটো অস্ট্রেলিয়ান গাভী ক্রয় করি। পরে গাভী দুটো দুধ কম দিলে আবার দুটো গাভী ক্রয় করি৷ পর্যায়ক্রমে গাভীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং দুধ বিক্রি করতে সমস্যা দেখা দেয়। তখন দুধ দিয়ে মিষ্টি করার জন্য শহরের মল্লিকা রেষ্টুরেন্টের সামনে স্টার সুইস্ট নামে একটি মিষ্টির দোকান দেই। মল্লিকা রেষ্টুরেন্টের সামনে যখন দোকান দেই তখন নিজের কাছে মনে হলো যে দোকানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তখন বড় চৌরাস্তায় স্টার সুইট্স ও রেস্টুরেন্ট নামে আরেকটা দোকান নেই। তখন আমার ফার্মে প্রায় ১১০ টির মত গাভী থাকে। এদিকে করোনার দুই বছরে দোকানপাট বন্ধ থাকায় দুধের চাহিদা কমেছিলো। তাই তখন গাভীর সংখ্যাও তখন কমে যায়। তবে এখন বাচ্চাসহ প্রায় ২২ টির মত গাভী আছে ফার্মে। যা থেকে ১৫৫ কেজি দুধ আসে এবং দুধ বিক্রি করে মাসে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মত ব্যবসা হয় এবং বছরে ১৯ লক্ষ টাকার উপরে লাভ হয়। রেষ্টুরেন্টের মিষ্টি ও রসমালাইয়ের বাকি যতটুকো দুধের প্রয়োজন হয় সেটুক পাশের বিভিন্ন ডেইরি ফার্ম থেকে সরবরাহ করি। পাশাপাশি ৬ বিঘা জমিতে জার্মানির ঘাস চাষ করে গাভীর খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরো বলেন, পটুয়াখালীতে এখন অনেকেই ডেইরি ফার্ম তৈরি করছেন। তবে খামারিরা নায্য মুল্যে দুধ বিক্রি করতে পারছেন না তাই তিনি তাদের খামার থেকে দুধ ক্রয় করে মিষ্টিজাত দ্রব্য তৈরি করছেন। আর এসব পণ্যের গুনগত মান অনেকটায় ভাল।
পটুয়াখালী জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ফজলুল হক সরদার বলেন, সাগর মাহমুদের ডেইরি ফার্ম নিয়ে আমরা খুবই গর্বিত। সে নিজ উদ্যোগে ডেইরি ফার্ম করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সরকারি ভাবে সাগর ডেইরি ফার্ম রেজিষ্ট্রেশন করা আছে।
তিনি আরো বলেন, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সবসময় তাদের পাশে আছে। যখন যে সহযোগিতা করা দরকার তার আমরা করে থাকি।