পানীয় হিসেবে বাঙালিদের কাছে ঘোল ও মাঠার আছে ব্যাপক চাহিদা। শত বছর পেরিয়ে গেলেও সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়া উপজেলার সলপ রেলস্টেশনের পাশে গড়ে ওঠা খালেক মালেক দুই ভাইয়ের ঘোল ও মাঠা এখনো স্বাদে অটুট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সিরাজগঞ্জ ছাড়াও দেশের নানা প্রান্ত থেকে এই ঘোল আমদানি করছে বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়িরা। এই পানীয় বিক্রি করে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জীবন-জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছেন তৈরি হয়েছে অনেক কর্মসংস্থান।

গরম বাড়ার সাথে সাথে এই ঘোলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এছাড়া আসন্ন রমজান মাসেও এই পানীয় তৈরির ব্যস্ততাও বেড়ে যাবে।
ঘোল-মাঠা তৈরির পাশাপাশি ঘোলের সঙ্গে মুড়কি মিশিয়ে এক ধরনের মজার খাবারও তৈরি হওয়ায় এই স্বাদ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে নানান বয়সী রসনাবিলাসীরা।

ঘোল ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক জানান, স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা দুধ নির্দিষ্ট সময় জ্বাল দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় সুস্বাদু এই পানীয়। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ মণ ঘোল ও মাঠা বিক্রি হয় এই এলাকায়। এছাড়া তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে আমি পুরস্কৃত হয়েছে। কিছু অত্যাধুনিক মেশিন পেয়েছি। খুব শীঘ্রই মেশিনগুলো সচল করব। তবে সরকারিভাবে কিছু আর্থিক অনুদান পেলে আরও বিস্তৃতভাবে এই ব্যবসা সম্প্রসারিত করা সম্ভব।

শতবছরের ঘোল তৈরির ইতিহাস সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, আমার দাদা সাদেক আলী শত বছর আগে কাজের খোঁজে রাজশাহী যান। সেখানে এক ঘোষের কাছ থেকে ঘোল ও মাঠা বানানো শিখে এসে ১৯২২ সালে সলপ রেল স্টেশন এলাকায় ব্যবসা শুরু করেন। তিনি প্রথম দিকে বাড়িতে ঘোল ও মাঠা বানিয়ে স্টেশন এলাকায় ফেরি করে বিক্রি করলেও ধীরে ধীরে কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এসে তার তৈরি এই পানীয়ের স্বাদ নিতে শুরু করেন। পরে দাদার মৃত্যুর পর আমার বাবা ও চাচারা এই ব্যবসার হাল ধরে। সেই সূত্র থেকেই বর্তমানে আমরাও দুই ভাই এই সুস্বাদু পানীয় তৈরির কাজে জড়িয়ে পড়ি।

স্থানীয় মোকলেসুর রহমান জানান, আগে এখানে দোকানপাট কম ছিল। তাদের ঘোলের দোকান (খালেক-মালেক) কেন্দ্র করে অনেকেই এই পানীয় ব্যবসা শুরু করছে। এই অঞ্চলের ঘোলের সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পরেছে। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে এই পানীয় খেতে।

সুস্বাদু এই পানীয় খেতে আসা শারমিন আক্তার বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। যখন বাড়িতে আসি (সিরাজগঞ্জ) পরিবার নিয়ে ছুটে চলে যায় ঘোল খেতে। এছাড়াও যখন ঢাকা যাবো সঙ্গে করে কয়েক লিটার নিয়ে যাবো।

সলপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শওকত ওসমান জানান, সলপের ঘোল অনেক সুস্বাদু। অনেক বছর আগে যেমন স্বাদ ছিল এখনো তেমনই আছে। ঘোলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতিবছর এখানে মেলার আয়োজন করা হয়। এছাড়া ভবিষ্যতে দেশের বাহিরে রপ্তানিতে এই ঘোল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।