নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ক্রোনী অ্যাপারেলস কারখানায় তৃতীয়বারের মত বেতন ভাতা পরিশোধ না করেই ছাঁটাই করার ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ৫৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারীকে চলতি মাসের বেতন দিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের ।
মঙ্গলবার সকালে চাকরিচ্যুত কর্মীরা কাশিপুর হাটখোলা এলাকায় অবস্থিত কারখানাটির সামনে অবস্থান নেয়। প্রায় তিন ঘন্টা অবস্থানের পরেও বকেয়া বেতন সহ আনুসাঙ্গিক বিষয়ে সমাধান না পাওয়ায় ফিরে যান কর্মীরা। ক্রোনী অ্যাপারেলসে গত তিনমাসের মধ্যে তৃতীয়বারের মত শ্রমিক ছাটাই ও অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে।
ক্রোনী অ্যাপারেলসের সিনিয়র অফিসার মাহাদী হাসান বলেন, ‘গত শবে বরাতের রাতে আমাদের ৫৮ জনকে ছাঁটাই করে। বলা হয়েছিলো যাবতীয় বেতন ভাতা বুঝিয়ে দেয়া হবে। আজ সকালে বেতন নিতে এসে দেখি আমাদের নাম ছবি সহ গেটে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা কি দাগী অপরাধী যে আমাদের ছবি এভাবে টানানো হবে? তার উপর আমাদের চার মাসের বেতন বাকি। তারা কেবল চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দিবে, বাকি নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের বেতন দিবে না। উল্টো দুই মাস আগের তারিখ বসানো পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে চাপ দিচ্ছে তারা।’
কারখানার আরেক কর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের রুলস হচ্ছে কাউকে চাকরিচ্যুত করতে হলে তাকে ৩ মাসের বেতন দিতে হবে। আমরা এখানে একেকজন ৮ থেকে ১০ বছর কাজ করছি। গত ৩ মাস কেবল হরতাল, অবরোধ, নির্বাচন ইত্যাদির অজুহাত দিয়ে বেতন দেয়নি। এখন বেতন ছাড়াই ছাঁটাই করেছে তারা।’
কারখানার এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার আফাজ খান বলেন, ‘গত ৩ মাস কিভাবে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। বাড়িওয়ালা প্রতিনিয়ত ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, মহল্লার দোকানে হাজার হাজার টাকা বাকি জমে গেছে। এমন অবস্থায় অমানবিকের মত এই মালিকপক্ষ আমাদের ছাঁটাই করেছে আমাদের। সমাধান না পেলে আমরা শ্রম আদালতে যাব।’
এই বিষয়ে কারখানার এইচআর এডমিন মাইদুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি, কথা বলতে পারছি না।’
একই বিষয়ে ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানী বলেন, ‘আমরা তাদের দেনা পাওনা পরিশোধ করবো। কারখানায় মানুষ বেশী হয়ে গেলে একটু এডজাস্টমেন্ট করতেই হয়। তাদের দেনা পাওয়া হিসেব করছি, দ্রুতই একাউন্টে দিয়ে দিব। তাদের বলা হয়েছে চলতি মাসের বেতন নিয়ে যেতে। পরবর্তীতে বাকি বেতনগুলো পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর ক্রোনী গ্রুপের ‘ক্রোনী টেক্স সোয়েটার লিমিটেড’ কারখানা লে অফ ঘোষনা করা হয়। এতে প্রায় ৮০০ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়। পরবর্তীতে চলতি মাসের ৮ ফেব্রুয়ারি একই গ্রুপের ‘অবন্তি কালার টেক্স লিমিটেড’ এর শ্রমিকরা দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবীতে বিক্ষোভ করে।