নোয়াখালির মাইজদি বাজার থেকে রাজগন্জ ও ছয়ানীবাজার হয়ে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগন্জের হাদারঘর (পেট্রোল পাম্প) পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের কয়েকটি অংশে কাজ করে নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় বছর। জমি অধিগ্রহন করলেও টাকা দেয়া হয়নি মানুষদের। ওই সড়কের রাজগন্জ বাজার ও ছয়ানীবাজার অংশে কাজ না করা ও অধিগ্রহন না করায় চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বাজার ব্যাবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন।

জমি অধিগ্রহন করে সড়কটি দ্রুত সম্প্রসারন করতে সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারী) সকালে সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির কাছে এবং ২০ ফেব্রুয়ারী সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ে রাজগন্জ ও ছয়ানী বাজারের ৭০জন ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসী লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে- সেতুমন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।।

ব্যস্ততম-নোয়াখালী বাজার থেকে-লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগন্জ সড়কে দুর্ভোগ নিত্যসঙ্গী করে চলাচল করতে হয় কয়েক লাখ মানুষকে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন কাজ করার সময় স্থানীয়দের বাধা ও কয়েকটি স্থানে জমি অধিগ্রহন করতে না পারায় সম্প্রসা রন কাজ বন্ধ রেখেছেন। এদিকে, ঠিকাদার রানা বিল্ডার্সও কাজ ফেলে চলে গেছেন। এতে ভোগান্তি চরমে আকার ধারণ করেছে।

ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাবসায়ীদের পক্ষে ছয়ানী বাজারের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, ২০১৯-২০ সালের দুই প্যাকেজে ২০ কিলোমিটার সড়ক কাজ পায় নোয়াখালি ও লক্ষ্মীপুরের দুই যৌথ প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালে সড়কের আশেপাশের মানুষদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহন করে মসজিদ ও দোকান রেখেই কাজ শুরু করলে হঠাৎ করে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। অপরদিকে লক্ষ্মীপুরের ৭ কিলোমিটার অংশে রাস্তার পাশে মসজিদ ও দোকান রেখে চন্দ্রগন্জের হাদার ঘর পর্যন্ত কাজ শেষ করে। মাঝখানে রাজগন্জ বাজার, ছয়ানী বাজার ও বসুরহাট এলাকায় গত দের বছর কাজ বন্ধ রাখা হলেও ৮ ধারা নোটিশ তারা পাননি। অনেক স্থানে নতুন সড়কটি নীচু স্থানে ধ্বসে পড়েছে। সাধারন মানুষের জমি অধিগ্রহন করলেও সড়ক কর্তৃপক্ষ কাউকে টাকা দেয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, সওজের কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মোঃ তারেক ইকবাল ও নোয়াখালি সার্কেলের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া এ কাজের ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে নিজের ইচ্ছামতো প্রাক্কলন তৈরী করেছিলেন। এতে ২০ কিলোমিটার (নোয়াখালির মাইজদি অংশে ১৩ কিলোমিটার এবং লক্ষ্মীপুরের সদর অংশের ৭ কিলোমিটার) সড়ক প্রশস্তকরন ও সংস্কারের জন্যই ৯০ কোটি টাকা বরাদ্ধ করা হয়। অথচ সড়কটির রাজগন্জ বাজার, ছয়ানী বাজার এলাকার কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছ। অপরদিকে অধিগ্রহন না করায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় লোকজন।

রাজগন্জ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম ও ছয়ানী ইউপি ওহিদুজ্জামানসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০২০ সালের জুন মাস থেজে শুরু হওয়া সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারন কাজ রাজগন্জ বাজার পর্যন্ত করা হয়। আবার মাঝখানে কাজ করে ছয়ানীবাজার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়। আবার ওই সড়ক দিয়ে ঘুরে কয়েকটি বাজারে কাজ না করে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগন্জের হাদারব্রীজ পর্যন্ত প্রশস্ত করণের কাজ করা হয়। ধূলাবালিতে চলাচলকারী দের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। ঠিকাদারের মনগড়া কাজের কারণে প্রতিদিন ওই সড়কের বাজারগুলোতে তীব্র জানজট ও দুর্ঘটনায় জনজীবন দুর্বিষহ হয়েউঠে, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘন্টা।

সওজ সূত্র জানায়, সড়কটি এখন ১৮ ফুট চওড়া রয়েছে। এটি ৪০ ফুট করা হবে। দুই পাশে ছয় ফুট সমপ্রসারণের পাশাপাশি পাঁচ ফুট করে ১০ ফুট আরো মাটি ফেলে ভরাট করা হবে। নোয়াখালির মাইজদি বাজার থেকে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগন্জের শাহী পেট্রোলপাম্প পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্ধ হয়। কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার রানা বিল্ডার্স। পরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজে চুক্তিবদ্ধ হয় হাসান বিল্ডার্স ও মেসার্স সালেহ আহমেদ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের জুন মাসে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যায়ে সড়কটির প্রায় ২০ কিলোমিটারের কাজ শুরু হয়। যাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে গাইডওয়াল করা হয়েছে, তাদেরকে কোন টাকাও দেয়া হয়নি এবং ৮ ধারা নোটিশ দেয়া হয়নি। কিন্তু ৪ ধারা ও ৭ ধারা নোটিশ সাধারন মানুষ পেয়েছেন। সওজের কর্মকর্তাদের সঠিক তদারকি না থাকায় ঠিকাদারের লোকজন খামখেয়ালি ভাবে নির্মাণ কাজ শেষ না করেই চলে গেছেন। কাজে পুরনো ইট-খোয়া ও রাবিশ ব্যবহার করা হয়। নামমাত্র নতুন মাটি, খোয়া ও বালুর ব্যবহার হয়।ধুলাবালির কারণে সামনে কী আছে তাও দেখা যায় না। পাশের গাছপালা ও ফসলি জমি বিবর্ণ হয়ে গেছে। যানবাহন চালকরা নিজেদের মতো করে চলাচলের চেষ্টা করলে রাজগন্জ ও ছয়ানীবাজার এলাকা তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কটিতে ছোট-বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে।

বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডাসের স্বত্বাধিকারী মো. আলম ও কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা নাজমুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে রানা বিল্ডার্সের নিয়োগপ্রাপ্ত কার্য সহকারি মোঃ তুহিন বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। যা বলার সড়কের প্রকৌশলীরা বলবেন।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালির সওজের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দুই জেলার দু-একজন কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ অনিয়ম হচ্ছে। সড়কটির কাজ দেড় বছর বন্ধ। লক্ষ্মীপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা নোয়াখালির প্রকৌশলীদের কাজটি সহযোগিতা করেছি। কোনো অনিয়মের অভিযোগ কেউ করেনি।।

নোয়াখালি সওজের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার মোবাইলফোনে বলেন, লক্ষ্মীপুর অংশে ৭ কিলোমিটার সম্প্রসারন করা হয়েছে। নোয়াখালির অংশে ১৩ কিলোমিটারের রাজগন্জ ও ছয়ানীবাজার অংশে জমি অধিগ্রহনে সমস্যার কারনে সম্প্রসারন করা যাচ্ছেনা। ১২০ কোটি টাকা অধিগ্রহনে বাজেট হয়। কাজের জন্য ৯০কোটি টাকা বাজেট হয়। প্রায় অংশের কাজ শেষ হয়েছে আর বাকি কাজ সহসায় শুরুকরা হব।