শরীয়তপুরে সাংস্কৃতিককর্মী জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা হত্যার মূল আসামী আমিনুল ইসলাম জিতুর ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছ।

রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারী) সকাল দশটায় শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড জাজিরা উপজেলা শাখা এ মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে। মানববন্ধনে নীলার পরিবারের সদস্য, এলাকাবাসী, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় তারা মামলার আসামী আমিনুল ইসলাম জিতুর ফাঁসি দাবি করেন।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার খোসা শিকদার কান্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান খানের কনিষ্ঠ কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা। গত ২৬ অক্টোবর দুপুরে নিজ শয়নকক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নীলার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান খান বাদী হয়ে শরীয়তপুরের সদর উপজেলা নিরালা এলাকার বাসিন্দা বজলুর রহমানের ছেলে আমিনুল ইসলাম জিতুকে (৩২) আসামি করে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে জিতু জেলে রয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম জিতু গত ২৪ অক্টোবর দুপুরে জান্নাতুল ফেরদৌস নীলাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শরীয়তপুরে ডেকে নেয়। পরে সেখানে তাকে একদিন রেখে বিয়ে না করে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়। এরপর নীলা ২৫ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে বাড়ীতে ফিরেন এবং বাড়ীর কারো সাথে কোন ধরণের কথা না বলে, রাতের খাবার না খেয়ে নিজের শয়নকক্ষে শুয়ে পড়েন। বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় পরেরদিন সকালে তার সাথে কথা বললে তিনি তার স্বজনদের জানায় অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম জিতুর সঙ্গে তার আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। জিতু তাকে বিয়ে করবে বলে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন অপবাদ দিয়েছে। এসব কথা বলার পরে ঐদিন দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিশ্রাম নেয়ার কথা বলে নিজের শয়নকক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজা বন্ধ করার পর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তার স্বজনরা তাকে ডাকাডাকি করে। এরপরও কোন সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে তাকে সিলিং ফেনের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।

জানা যায়, জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা একজন স্বেচ্ছাসেবী সমাজকর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন। সে শরীয়তপুর জেলার অঙ্কুর থিয়েটার নামে একটি সংগঠনের সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন এবং আমিন মাহমুদ জিতুও অঙ্কুর থিয়েটারের একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে কাজ করতেন ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করতেন। সে সুবাদে অভিযুক্ত আমিন মাহমুদ জিতুর সাথে নীলার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন। একপর্যায়ে জান্নাতুল ফেরদৌস নীলা অভিযুক্ত আমিন মাহমুদ জিতুকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়।

মানববন্ধনে মামলার বাদী নিলার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান খান অভিযোগ করে বলেন, আমিনুল ইসলাম জিতু পূর্বের বিয়ে গোপন করে আমার মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে করে। সে আমার মেয়েকে ব্যবহারক করে পরে তার সাথে প্রতারণা করে এবং আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছে। তার কারণে আমার মেয়ে পলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। জিতু একজন লম্পট, ঠান্ডা মাথার খুনি। আমি জিতুর ফাঁসি দাবি করছি।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, নীলা হত্যা মামলার চার্জশীট আদালতে দাখিল করা হয়েছে এবং অভিযুক্ত আসামী আমিনুল ইসলাম জিতু বর্তমানে জেল হাজতে আছে।