গোপালগঞ্জ পৌরসভার উদয়ন রোডে বৃদ্ধ মা–বাবাকে বাড়িছাড়া করতে ছেলে ও পুত্রবধূসহ তাদের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজন কৌশলে সব সম্পত্তি লিখে নেওয়ার চেষ্টা ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (৩১ মে) সকালে প্রেসক্লাব গোপালগঞ্জের সম্মেলন কক্ষে ভুক্তভোগী পরিবার এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব জানান।

মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগীদের বড় মেয়ে তানিয়া খান বলেন, আমার পিতা ভুক্তভোগী আব্দুস সামাদ সোবাহান খান একজন অন্ধ ও অসহায় ব্যক্তি। ১৯৭১ সালে প্রথম বিবাহ করে হাফেজা বেগমকে। ১৮ বছর সাংসারিক জীবনকালে ছেলে-মেয়েদের পিতা হয়। কিন্তু স্ত্রী হাফেজা বেগমের কু-অভ্যাস এবং পরম-পুরুষদের প্রতি আসক্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে সে তার ৬মাসের শিশু সন্তানসহ অন্য শিশুসন্তানদের ফেলে নগদ অর্থ ও স্বর্ণলংকার নিয়ে পরপুরুষের সাথে চলে যায়। পরবর্তীতে আমার বাবা ২৯/০৮/১৯৮৯ সালে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে হাফেজা বেগমকে তালাক প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে আমার মাতা আকলিমা বেগমকে পারিবারিকভাবে বিবাহ করেন। আমার মাতা আগের পক্ষের ৬মাসের সন্তানসহ বাকি সব সন্তানদের লালন-পালন করেছেন।

অভিযুক্ত আমার পিতার প্রথম পক্ষের ছেলে জাহাঙ্গীর খান মেজবাহকে ভালোবেসে গোপালগঞ্জের বসতবাড়ি ব্যতীত সকল জায়গা জমি বিক্রি করে সব অর্থ তার হাতে তুলে দেয়। ভবিষ্যতে অন্ধ পিতাকে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সে দেখভাল করার পরিবর্তে আমার অন্ধ বাবা ও মা আকলিমা বেগমকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং গোপালগঞ্জের বসতবাড়ী লিখে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান করেন। যার প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। শুধু নির্যাতন করে ক্ষান্ত হয়নি বরং ২০১৮ সালে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। পরবর্তীতে সেই মিথ্যা মামলা থেকে ২০১৯সালে অব্যহতি পাই। তবে অভিযুক্ত মেজবাহ পুনরায় ২০২২সালে আরও একটি মিথ্যা মামলা করেন। আবারও আমরা উক্ত মিথ্যা মামলা থেকে ২০২৩ সালে অব্যহতি পাই। এরই অংশ ধরে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর খান মেজবাহ, তার স্ত্রী জেনিথ, তার শ্যালক রাইসুল রাজসহ অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমার পিতা, মাতা, আমিসহ আমার বোনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে গোপালগঞ্জের বসত ঘর (এক তলা বিল্ডিং) থেকে ১০/০৪/২০২০ ইং তারিখে বের করে দেয়। তাদের ভয়ে নিরুপায় হয়ে পাশের একটা টিনের ঘরে বাবা-মা অবস্থান করে কোনো রকম মানবতার জীবন-যাপন করেন। এমতাবস্থায় পিতা-মাতার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২৪/০৯/২২ইং তারিখে গোপালগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু তাতেও নির্যাতন শেষ হয় না। আমাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার প্রধান ফটকটি তালাবদ্ধ করে আমাদের যাতায়াত বন্ধ করে দেয়। ৩০/০৫/২৩ ইং তারিখে সকাল আনুমানিক ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে আমার মা আকলিমা বেগমকে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর খান মেজবাহ, তার শ্যালক রাইসুল রাজ জকি, তার বোনের ছেলে আকাশ, তার তিন বোন জামাই ইসমাইল ভূইয়া, আরিফ, পলাশ উল্লেখিত ব্যক্তি বর্গ মিলে হত্যার চেষ্টা চালায়। সে অনেক চেষ্টা করে সেখান থেকে পালিয়ে আসে। উক্ত ঘটনার প্রমাণ স্বরুপ অডিও রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। পরবর্তীতে আমার পিতা বাসা থেকে বের হতে গেলে তাকেও মারধর করে। সেসময় নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য ৯৯৯-এ কল দেয়া হয় এবং গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপারের দারস্থ হই।

অভিযুক্তরা আমাদের আইনী সহায়তা নিতে দেখে আমাদের উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়। তার কয়েকঘন্টা পর আনুমানিক বিকাল ৩টা ৩০মিনিটের আমার মা আকলিমা বেগমকে ও আমার অন্তঃসত্ত্বা বোন রেহানা খান ঘরের বাইরে বের হলে তাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় এবং আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করে। তখন তার স্বামী সাহিন নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও গুরুতর আহত করে।

স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। আর আমার পিতা-মাতা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে আসে।

পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা চালায় অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর খান মেজবাহ, রাইসুল রাজ জকি, ইসলাম ভূইয়া, আরিফ, পলাশ আকাশ, নাছিমা, মাছুমা, আসমা, তাহেরা, তাসলিমা গং। উক্ত ঘটনার প্রমাণ স্বরুপ বিভিন্ন ভিডিও, সিসি টিভি ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতন ও হামলার শিকার পরিবার সুষ্ঠু বিচারের আকুতি জানিয়েছেন।

বার্তাবাজার/এম আই