পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে নাটকীয়তা যেনো থামছেই না। নানা অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে দেশটির রাজনীতি। এর মাঝেই নজিরবিহীন এক ঘটনা ঘটালেন পাকিস্তানের জামায়াত-ই-ইসলামি করাচির প্রধান হাফিজ নাইম-উর-রহমান। নির্বাচনে জয় পেয়েও পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীর জন্য নিজ আসন ছেড়ে দিলেন হাফিজ।

পাকিস্তানের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা ‘ফরম ৪৭’ অনুয়ায়ী, হাফিজ নাইম করাচির পিএস-১২৯ আসনে ২৬ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফ বারীর ভোট দেখানো হয়েছে ১১ হাজার ৩৫৭ ভোট। তবে এই ফলাফল মানতে নারাজ হাফিজ। করাচিতে গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে হাফিজ নাইম স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট কম দেখানো হয়েছে বলে দাবি করে নিজের আসন ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন।

জামায়াত-ই-ইসলামি করাচির এই নেতা বলেন, এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফ বারী জয়ী হয়েছেন। তিনি ৩১ হাজার ভোট পেলেও, সেটা কমিয়ে ১১ হাজার দেখানো হয়েছে। এমনকি, বারীর ভোট কমিয়ে ওই আসনের মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) প্রার্থীর ভোট ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার দেখায় ইসিপি। তারপরও এমকিউএম-পির প্রার্থী জিততে পারেননি। আমি এই আসনটি ছেড়ে দিচ্ছি।

পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সক্রিয় হাফিজ। ৯০ দশকের গোড়ার দিকে ইসলামী জমিয়ত-ই-তালাবা (আইজেটি) তে যোগদান করেন হাফিজ। এ পর্যন্ত দুবার দলটির সভাপতি হয়েছেন তিনি। তিনি করাচির সহকারী সেক্রেটারি, জেনারেল সেক্রেটারি এবং ডেপুটি আমির হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৩ সালে জামায়াত-ই-ইসলামী করাচির আমির হন ৫৩ বছর বয়সী এ রাজনীতিবিদ।

হাফিজ নাইমের এমন উদারতার প্রশংসা করেছে পাকিস্তান তেহেরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। দলটির অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হাফিজ নাইমের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন কারাবন্দী নেতা ইমরান খান। পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদেরও একই ধরনের সততা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সাধারণ নির্বাচনের চার দিন পরও পাকিস্তানিরা জানেন না কোন দল পরবর্তী সরকার গঠন করবে কিংবা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। আবার প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর আশীর্বাদের পরও একক ক্ষমতায় যাওয়ার সৌভাগ্য হচ্ছে না নওয়াজের।

রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রিত্বের পদ ভাগাভাগি করতে যাচ্ছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ। ক্ষমতার পাঁচ বছর দুই দলের প্রধান আড়াই বছর করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। দুই দলই এই ক্ষমতা উপভোগ করতে যাচ্ছে বলে আলোচনা হয়েছে। প্রায় দুই বছরের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পর গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয় বহুল কাঙিক্ষত সাধারণ নির্বাচন।

বার্তা বাজার/জে আই