ডামি সরকারের বিরুদ্ধে ডামি আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো যাবেনা। সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে বলে জানিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন।

মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাসহ আটক সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, তিতুমীর কলেজ শাখা। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ‘ডামি সরকারের বিরুদ্ধে ডামি আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো যাবেনা। সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের শক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামতে পারেনি, এটার দায় আমাদের সবার। জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ডামি নির্বাচন বয়কট করেছে। সুতরাং এখন রাজনৈতিক দলগুলোকে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ১৯৯০ সালে সমস্ত রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ-জামায়াত-জাতীয় পার্টি যুগপৎ আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করেছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য দলগুলোকে এককাতারে আনতে পারেনি।

এখনো পর্যন্ত যদি আমরা বিভেদ ভুলে রাজপথে একতাবদ্ধ হয়ে নামতে না পারি, তাহলে যুগের পর যুগ এই ফ্যাসিবাদ সরকার ক্ষমতায় থেকে যাবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর এই ব্যর্থতার জন্য জনগণকে ভুক্তভোগী হতে হবে, জনগণ যার জন্য দলগুলোর কাছে জবাবদিহিতা চাইতে পারে। সুতরাং দেশের জনগণের মুক্তি ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আসুন ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ে তুলি।

সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ভারতের নির্দেশনা গৃহবন্দী করে রেখেছে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তাবেদারি সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন, ‘ওদের হাতে গোলামির জিঞ্জির, আর আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লাকে ৬ মাস ধরে কনডেম সেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে। কারণ সে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র ঐক্যের আহ্বান করেছিলো।

আজকে বাংলাদেশের নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগেও হস্তক্ষেপ করছে ভারত। ভারতীয় আগ্রাসন দেশের জনগণ মেনে নিচ্ছে না। যেকারণে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন শুরু হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ তার সক্ষমতা অনুযায়ী গত ২৮ অক্টোবর থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আমরা জাতিকে কথা দিয়েছিলাম, আন্দোলন সফল না হলে ঘরে ফিরে যাবো না। ঠিক এখন বলছি, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সফল না হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথে আছি। আপনারা রাজপথে নামুন, অবশ্যই এই আন্দোলন সফল হবে এবং জনগণের মুক্তি মিলবে। তবে এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জনগণকে নামতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া পৃথিবীর ইতিহাসে কোন আন্দোলন সফল হয়নি।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ বলেন, ‘কারাগারে এক লাখের বেশি মানুষ আটক রয়েছে, আমরা কত জনের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামবো? আমাদের এই অবৈধ সরকারকে পতনের আন্দোলন করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে কারাগারে আটক সকল রাজবন্দীই মুক্তি পাবে। আমরা ভারতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিনা, আমাদের আন্দোলন ভারতের আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।’

গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন বলেন, ‘বর্তমান সময়ে পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেক সাধারণ মানুষ। ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বংশাল থানায় পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় বডি বিল্ডার ফারুকের। ফারুকের স্ত্রীর অভিযোগ তাঁর স্বামীর মুক্তির জন্য অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয় পুলিশ।

এছাড়াও বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে উঠে এসেছে ২০১৯ সালে রাজিব ধর রাজু নামে একজনের নির্যাতন। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, বিএনপি সহ বিরোধী দলের প্রায় ৩ হাজার নেতা কর্মীকে সাম্প্রতিক সময়ে সাজা দিয়েছে আদালত, যে মামলা গুলোর বাদী পুলিশ নিজেই। সরকার একটি অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া করে দিয়েছে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিকুল ইসলাম বলেন, দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে,নবাংলাদেশকে সিকিম হতে দেয়া যাবে না।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের তিতুমীর কলেজ শাখার সভাপতি আফতাব মাহমুদ, আর সঞ্চালনা করেন সাধারাণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জাল হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ সভাপতি সাব্বির হোসেন, নেওয়াজ খান বাপ্পী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আলম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সম্রাট প্রমুখ।

বার্তা বাজার/জে আই