মিয়ানমারে তরুণ বয়সী সব নারী-পুরুষের সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছে জান্তা সরকার। এমন একটি সময় এই ঘোষণা আসলো যখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দেশটির সামরিক বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে।

মিয়ানমারে আগে থেকেই চালু থাকা বাধ্যতামূলক নিয়োগসংক্রান্ত একটি আইনকে কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে।

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, এখন থেকে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী সকল পুরুষকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে অন্তত দুই বছর কাজ করতে হবে।

আর নারীদের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৭ বছরেরে মধ্যে তাদেরকেও একই মেয়াদে সামরিক বাহিনীতে চাকরি করতে হবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি জান্তা সরকার।

সেনাবাহিনীতে তিন বছর থাকতে হবে। চলমান রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এ নিয়োগ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে একের পর এক অপমানজনক পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। ২০২৩ সালের শেষের দিকে মিয়ানমারের তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিলে হামলা চালিয়ে শান রাজ্যের সীমান্ত ক্রসিং এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দখল করে নেয়।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই রাজ্যটি মিয়ানমারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি দিয়েই সড়কপথে চীনের সঙ্গে বেশির ভাগ বাণিজ্য সংঘঠিত হয়ে থাকে। গত মাসে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) জানায় যে, তারা মিয়ানমারের চিন রাজ্যের পালেতোয়া এবং মিওয়াতে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত শেষ সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

এর আগে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে সতর্ক করেছিলেন যে, বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে দেশ ভাগ হয়ে যেতে পারে। দেশের সামরিক বাহিনীতে নাগরিকদের বাধ্যতামূলক যোগদানের বিধান রেখে ২০১০ সালে মিয়ানমারে একটি আইন চালু করা হয়। কিন্তু এতদিন তা কার্যকর করা হয়নি।

নাগরিকদের কেউ এই আইন না মানতে চাইলে একই মেয়াদে জেল খাটতে পারে বলেও আইনে বলা হয়েছে। ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিল জান্তা সরকার। সম্প্রতি সেই জরুরি অবস্থা আরও ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

২০১১ সালের গণতন্ত্রের দিকে অগ্রসর হওয়ার আগে মিয়ানমার প্রায় ৫০ বছর নিপীড়নমূলক সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। এরপর একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেশটির ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল।

কিন্তু ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির সামরিক বাহিনী পুনরায় ক্ষমতা দখল করে নেয়। এরপর থেকেই মিয়ানমারে যুদ্ধ ও সহিংসতায় চলে আসছে। এতে দেশটির হাজার হাজার নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর থেকেই উত্তেজনা চলতে থাকলেও এতোটা কোনঠাসা পরিস্থিতিতে দেশটির সেনাবাহিনীকে এর আগে আর পড়তে হয়নি।

বার্তা বাজার/জে আই