রাষ্ট্রচিন্তার আয়োজনে আজ রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে “কেউ জেতেনি” বলে মন্তব্য করেছেন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ দল হিসেবে নিজেকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে বলে তারা মনে করেন।

“৭ জানুয়ারির নির্বাচন: প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় আলোচকরা এই নির্বাচনের নানামাত্রিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর রাজীর সভাপতিত্বে এবং আইন গবেষক লোকমান বিন নুরের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন লেখক ও সাহিত্যিক রাখাল রাহা, ইউনাইটেড লইয়ার্স’ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব, কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা পিয়াস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক সেলিম খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশরেকা অদিতি হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদুল হক, ইমরান ইমন, হাসিবউদ্দিন হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব গোলাম শফিক প্রমুখ।

আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব বলেন রাষ্ট্রের অর্থে বাকশালের জাতীয় সম্মেলন হয়েছে ৭ জানুয়ারি। একটা সময় ট্যাবু ছিল বিএনপির সাথে বামপন্থীরা আন্দোলন করবে না। ইদানীং এই ট্যাবু কিছু পরিমাণে ভাঙ্গছে। শেখ হাসিনার অধীনে আর একটিও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নাই। এখন দরকার আন্দোলন, আন্দোলন এবং আন্দোলন। বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। ইতিমধ্যেই আমরা সীমান্তে নানা ধরনের অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি।

মাহবুব মোর্শেদ বলেন, আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে এ কথা সত্য নয়। আমরা শুরু করেছি মাত্র। এই প্রথম বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে। এই লড়াই সহজ হবে না, কিন্তু বিজয় আমাদের অনিবার্য। হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নাই। রাষ্ট্রচিন্তা, গণতন্ত্র মঞ্চসহ সকল বিরোধী দলকে একসাথে কাজ করে যেতে হবে।

লেখক রাখাল রাহা বলেন, আপনার কর্মসূচি আরেকজন বাস্তবায়ন করে দেবে, এই দিবা স্বপ্ন থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জনগণ এই ডামি নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ডামি আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ হটানো যাবে না। শেখ হাসিনা জারের চাইতেও নিকৃষ্ট শাসকে পরিণত হয়েছেন। লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা এর দায় এড়াতে পারে না। হালুয়া রুটির লোভে অনেকেই মাথা নত করেছেন।

সাইমুম রেজা পিয়াস তার বক্তব্যে বলেন, বৈশ্বিক পরাশক্তিসমূহের নানা প্রতিযোগিতার মধ্য থেকে আমাদের সর্বোচ্চ ফায়দা নিতে হবে। এজন্য জাতীয় সংহতি দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা নানাভাবে বিভক্ত। বিভক্তি জিইয়ে রেখে আমরা সুবিধা করতে পারব না। তা আওয়ামীলীগকেই সুবিধা দেবে।

মোশরেকা অদিতি হক বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোট নাই মানে কিছুই নাই। কোনো অধিকারই নাই। জনগণ কেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনে সাড়া দিল না তার মনস্তত্ত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে। ক্রমশ ক্রিটিক্যাল চিন্তার পরিসর ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।

বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে এই ঘাপলা বরাবরই ছিল। দলীয় সরকারের অধীন কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনের ইতিহাস বাংলাদেশে নাই। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জনগণকে সংগঠিত করে সংবিধান সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করতে হবে। তা না করলে অবাধ লুটপাট, খেলাপি ঋণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি কিছুই ঠেকানো যাবে না। এজন্য রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবী সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।

সভা প্রধানের বক্তব্যে আর রাজী বলেন, পরাজয়ের গ্লানি কাটিয়ে উঠতে গেলে সম্মিলিত প্রতিরোধের রাজনীতির পরিসর বড় করতে হবে।

বার্তা বাজার/জে আই