সবুজ লতায় মোড়ানো বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে তরমুজ গাছ। এর ফাঁকে ফাঁকে ফলও ধরেছে কোন কোন গাছে। কিন্তু হঠাৎ করেই শেখড় নিস্তেজ হয়ে একের পর এক মরছে গাছ। বালাই নাশক (কীটনাশক) প্রয়োগেও হচ্ছে না কোন সমাধান।

দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে তরমুজ উৎপাদনে অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার দুইটি চরে এভাবেই অজানা কারণে মারা যাচ্ছে তরমুজ গাছ। ফলে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তারা। এটি কোন রোগ নাকি ভাইরাস তা এখনও নির্ণয় করতে পারেনি কৃষি বিভাগ। সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে জানিয়ে কৃষি বিভাগ বলছে, এই মুহূর্তে খুবই অল্প পরিসরে গাছ আক্রান্ত হয়েছে। তবে এর পরিধি যেন না বাড়ে এজন্য গাছ মরে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করতে বিশেষজ্ঞদের গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী ও চরইমারশন চরের বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। এই দুই চরেই ফলন্ত তরমুজ গাছ আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়ার ঘটনা বেশি। তরমুজ চাষীরা বলছেন, আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলে দিতে হচ্ছে। তানাহলে পাশের গাছও আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

কাউখালী চরের তরমুজ চাষী মাসুম সিকদার বলেন, ‘আমি তিন কানি জমিতে তরমুজ দিছি। ১২ হাজার গাছের চারা ছিল। এখন তিনে ভাগের একভাগই মরে গেছে। এখন দুই ভাগ আছে। তাও একের পর এক শেখড় এবং পাতা শুকিয়ে মরছে। এটার কারণ যে কি বুঝি না। পানি দিচ্ছি, ঔষধ ব্যবহার করছি কোনটাতেই কোন কাজ হচ্ছে না। অনেক টাকা খরচ করতেছি। ফল ধরেছে, এমন গাছও মরে যাচ্ছে। সবাই-ই দাদন আর ঋণের টাকা এনে তরমুজ দিছে। এখন লোকসান হলেতো আমরা মাঠে মাইর।’

ওই চরের আরেক চাষী মনির হাওলাদার বলেন, ‘আমি সাত কানি জমিতে তরমুজ দিছি। আমার প্রায় তিন কানি জমির গাছ মরে গেছে। গাছ লাগানোর শুরু থেকেই মরছে। একদিকে লাগাই, আরেকদিকে মরে। সকালে দেখি ভাল, বিকেলে দেখি গাছ মরে গেছে। কোন ঔষধেও কাজ হচ্ছে না। এখন চার কানি জমিতে গাছ আছে। তাও অল্প অল্প মরছে। যেভাবে মরতেছে, প্রজেক্ট থাকবেই না। সব বিনাশ হয়ে যাচ্ছে। আমার তিন কানিতে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে।’

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবার এ উপজেলায় ইতোমধ্যে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। তবে এ মৌসুমে সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং অনুক‚ল পরিবেশ থাকলে সাড়ে ৫ শ’ কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হবে বলে আশা ব্যক্ত করে কৃষি বিভাগ। কিন্তু অজানা কারণে গাছ মরে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছেন তরমুজ চাষীরা। কৃষি বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে ৬-৭ হেক্টর জমির তরমুজ গাছ মারা গেছে। তবে কৃষকরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি গাছ মরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে চারটি ধারণা দিয়েছেন।

১. নেমাটোডা নামক সুতাকৃমির আক্রমণ।
২. জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হওয়া কিংবা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।
৩. একই জমিতে বার বার তরমুজ আবাদ।
৪. কোন পরামর্শ ছাড়াই অতিরিক্ত সার এবং বালাই নাশক (কীটনাশক) প্রয়োগ।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই চারটির মধ্যে যেকোন সমস্যার কারণে গাছগুলো মরতে পারে। কিন্তু সঠিক কারণ নির্ণয় করতে বিশেষজ্ঞদের গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সমস্যা সমাধাণের চেষ্টা চলছে। আমাদের মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।’

স্থানীয় কৃষকরা জানান, তরমুজ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই জনপদে দিনদিন তরমুজ আবাদ কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরেই কোন না কোন রোগ কিংবা ভাইরাসে তরমুজ চাষীদের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগতো আছেই। ফলে দাদন ও ঋণের জালে হয়েছেন তারা জর্জরিত। তাই লোকসান দিয়ে তরমুজ আবাদে ঝুঁকি নিবে না অনেকেই; বলছেন কৃষকরা।

বার্তাবাজার/এম আই