কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন কর্তৃক জাল ভোট দেয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ।

ভাইরাল সে ছবিতে দেখা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন (৭ জানুয়ারি) আগে থেকেই নৌকা প্রতীকে সিল দেওয়া ব্যালট পেপার গুলো নিয়ে পাশের খালি বাক্স পূর্ণ করছিলেন তিনি। এসময় নুর হোসেনের গলায় নৌকার প্রার্থী শাহীন আক্তারের ব্যাজ পরিহিত ছিলো।

ঘটনাটি ঘটেছে, সাবরাং ইউনিয়নের মুন্ডার ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি ভোট কক্ষে। মুন্ডার ডেইল এলাকার স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ছবিতে দেখানো দৃশ্যটি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।

ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নুর হোসেন ব্যালটের একটি পূর্নাঙ্গ মুড়ি বই নিয়ে সীল মারছেন। এবং তার পাশে কোনো নির্বাচনী কর্মকর্তা নেই। বিধি মোতাবেক ভোট চলাকালীন সময় একজন তথাকতিত ভোটারকে শুধুমাত্র একটি ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

ছবিটি তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদিত কিনা তাও যাচাই করা হয় বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে। সেখানেও নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ছবিটি একটি মুঠোফোনে ধারণ করা।

এবিষয়ে নুর হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

এই কেন্দ্রের ভোটার ছিলো প্রায় সাড়ে তিন হাজার এবং ভোট পড়েছে ৭০ শতাংশ। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী নৌকা প্রতীক নিয়ে শাহীন আক্তার পেয়েছেন ১ হাজার ৭ শত ৯০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশরের পেয়েছেন ৬ শত ২৪ ভোট।

জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরীর জানান, ছবিটি আমার কাছেও এসেছে। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন ভোট দেয়ার সময় ছবিটি তোলা হয়েছে। এমনকি এই কেন্দ্রে উপস্থিত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাও আমাকে কোনরূপ অভিযোগ করেননি। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে একটি সম্পূরক প্রশ্নে ব্যালটের নিরাপত্তা এবং ভোট কেন্দ্রে অবাধ সাধারণ মানুষের যাতায়াত কিভাবে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে দাফতরিক ব্যস্ততার নিরিখে পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান।

কেন্দ্রটিতে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন টেকনাফ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। মুঠোফোনে তিনি জানান, কেন্দ্রে তাকে একবার দেখেছি। ওই বুথে যেসব পুলিং এজেন্ট দায়িত্বে ছিলেন তাদের সাথে কথা বলে আসল ঘটনা বলা যাবে।

এদিকে কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) সংসদীয় আসনে ৯০ হাজার ৩৭৩ ভোটের ব্যবধানে জিতে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শাহীন আক্তার।

তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর পেয়েছেন ৩১ হাজার ৭ শত ৭ ভোট। যদিও ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার মাত্র ৩০ মিনিট পূর্বে বিভিন্ন অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

এই আসনে ভোট পড়েছে ৪৮.৯৮ শতাংশ।

ই.এক্স/ও.আর/বার্তা বাজার