এবার দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক স্পর্শ করে নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙতে যাচ্ছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। এক হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনে দীর্ঘ ১৪ বছর লাগলেও পরবর্তী ২৬ মাসে ৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করেন এই চিকিৎসক।

এক যুগ ধরে ২ লাখ টাকার আশপাশেই ছিল তার প্রতিষ্ঠিত সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যয়। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ১৫০০ প্রতিস্থাপনের একটিতেও নেননি ব্যক্তিগত পারিশ্রমিক। প্রতিস্থাপন পরবর্তী ফলোআপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও আমৃত্যু রোগীর কাছে নেন না কোনো ফি। এ ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ১৫০০তম কিডনি প্রতিস্থাপন করবেন তিনি।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, আজ (বুধবার) সন্ধ্যায় ১৪৯৯তম রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা মো. সুজন মিয়াকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়েছে। কিডনিদাতা রোগী মা বাছিরন নেসা (৪১)। কাল (বৃহস্পতিবার) রাত ১১টার পর স্যার ১৫০০তম কিডনি রোগীর সফল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্নের মাইলফলক স্পর্শ করবেন, ইনশাআল্লাহ। মাদারীপুরের বাসিন্দা ২৭ বছর বয়সি ওই রোগীর নাম মো. শহিদুল ইসলাম। কিডনি দেবেন রোগীর বাবা মো. তারা মিয়া আকন।

জানা গেছে, নিজের পারিশ্রমিক ছাড়া ১ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করে দেশ-বিদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন শহিদ মুক্তিযোদ্ধার এ সন্তান। এরপর দায়িত্ববোধ যেন আরও বেড়ে যায়। মাত্র ২৬ মাসে আরও ৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপন করে নিজেই নিজের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছেন তিনি। কোভিডকালে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে প্রতিস্থাপন প্রায় বন্ধ হলেও তিনি ২৫০টি কিডনি প্রতিস্থাপন করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

রোগীদের মাত্রাতিরিক্ত চাপ ও মানুষের অসহায়ত্ব ঘুঁচাতে তিনি এখন সপ্তাহে ৫টি প্রতিস্থাপন করছেন। নিজ হাতে গড়া সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালের রেকর্ড বলছে, প্রতিস্থাপনের পর ১ বছর কিডনি সচল থাকার হার ৯৪ শতাংশ। ৩ বছর পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ, ৫ বছর পর্যন্ত ৭২ শতাংশ এবং ১০ বছর পর্যন্ত কিডনি সচল বা সুস্থ থাকার হার ৫০ শতাংশ। তরুণদের কিডনি দানের হার বেশি হলে গ্রহিতারা আরও দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে পারতেন বলে মত অধ্যাপক কামরুল ইসলামের।

সফল প্রতিস্থাপনের পরও ফলোআপ, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় খরচ চালাতে না পারায় অনেকে মৃত্যুর শিকার হন।সেদিক বিবেচনায় সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে প্রতিস্থাপন করা প্রতিটি রোগীর আমৃত্যু বিনামূল্যে ফলোআপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন কামরুল ইসলাম।

শুধু প্রতিস্থাপন নয়, উপযুক্ত ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন তৈরিতে অধ্যাপক কামরুল ইসলামের জুড়ি নেই বলে জানান ১৫০০ কিডনি প্রতিস্থাপনের সাক্ষী একমাত্র সার্জন ডা. তপন।

জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে প্রথম প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছিল অধ্যাপক কামরুল ইসলামের হাত ধরে। ৫০ এর অধিক প্রতিস্থাপন করা ইনস্টিটিউট এখন বিনামূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করছে। সিকেডিকে স্বাগত জানিয়ে মাসে একটির পরিবর্তে আরও বেশি কিডনি প্রতিস্থাপনের অঙ্গীকার ইনস্টিটিউটটির পরিচালকের। এক হাতে দেশের এক তৃতীয়াংশ কিডনি প্রতিস্থাপনের পর এখন হাসপাতালের পরিসর বাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি। প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বাড়াতে আগামীতে ক্যাডাভারিক বা ব্রেইন ডেথ রোগীর শরীর থেকে কিডনি নিয়ে তা প্রতিস্থাপনের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন এই মানবিক চিকিৎসক।

আগে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম যুগান্তরকে জানিয়েছিলেন, মানবতার কল্যাণে অসহায় রোগীদের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজের ভালো লাগে। আমি দুনিয়াতে এর প্রতিদান চাই না। মহান আল্লাহর পরকালের জন্য চাই। তবে কিডনি রোগ প্রতিরোধে আমাদের সবার সচেতনতা দরকার। রোগটির চিকিৎসার প্রসারে সরকার ও সমাজের বিত্তশালীদের আরও ভূমিকা রাখতে হবে। রোগীদের কিডনি দানে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

বার্তা বাজার/জে আই