বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা জারির পর ভারতে মান যাচাইয়ের পরীক্ষার সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ভারতের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি মেইডেন ফার্মাসিউটিকেলের বিরুদ্ধে। যে অভিযোগ অস্বীকার করে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তারা ভারত সরকারের পরীক্ষার জন্য পাঠানো নমুনা পাল্টে দেওয়া বা কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান, কোনোটাই করেননি।

গত বছর ভারতে তৈরি কাশির সিরাপ সেবনে গাম্বিয়ায় অন্তত ৭০ শিশু এবং তারপর উজবেকিস্তানে ১৮ শিশুর মৃত্যু হয়। যা নিয়ে হইচই শুরু হলে ওই বছর অক্টোবরে ভারতের মেইডেন ফার্মাসিউটিকেলের বানানো চারটি কফ সিরাপ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও।

এ ঘটনা ভারতের ওষুধ শিল্পের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে। কারণ, দেশটিতে বিশ্বের প্রায় একতৃতীয়াংশ ওষুধ প্রস্তত হয়। যে কারণে ভারতকে প্রায়শই ‘বিশ্বের ফার্মেসি’ নামে ডাকা হয়। দেশটি সারা বিশ্বে সবার প্রয়োজনে সবচেয়ে কম দামে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ করে।

ডব্লিউএইচও-র সতর্কতা জারির পর ভারত সরকার মেইডেন ফার্মার তৈরি ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করে এবং যথাযথ পরীক্ষার পর সেগুলোতে ক্ষতিকর কিছু পায়নি বলে জানায়। কিন্তু এখন অভিযোগ উঠেছে, ভারত সরকারের কাছে পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানোর সময় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে মেইডেন ফার্মা কর্তৃপক্ষ।

যার ভিত্তিতে হরিয়ানার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন মেইডেন ফার্মার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্তে নামে। তদন্তকারী কর্মকর্তা গত শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, তিনি তদন্ত শেষ করার খুব কাছে পৌঁছে গেছেন।

এদিকে মেইডেন এর প্রতিষ্ঠাতা নরেশ কুমার গওয়াল রয়টার্সকে বলেন, “আমি কখনো পরীক্ষার জন্য পাঠানো নমুনা পরিবর্তন করিনি। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। আমি এমনকি কোনো ঘুষও প্রদান করিনি।”

তাকে বা তার কোম্পানির কোনো প্রতিনিধিকে তদন্ত কর্মকর্তা হরিয়ানার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এর জয়েন্ট ডিরেক্টর গগণদীপ সিং তদন্তের সময় ডেকে পাঠাননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বরং দাবি করেন, তাদের এক প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি ওই অভিযোগ করেছে। তবে তিনি কোম্পানির নাম বলেনি।

এ বিষয়ে গগণদীপ সিং কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কিন্তু শুক্রবার তিনি রয়টার্সকে বলেছিলেন, তারা কাছে অভিযোগ আছে, ৫ কোটি ভারতীয় রুপি ঘুষের বিনিময়ে ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেইডেন ফার্মার কফ সিরাপের নমুনা ভারত সরকারের পরীক্ষাগারে পাঠানোর আগে পাল্টে দিতে সহায়তা করেছেন।

ওই কর্মকর্তার নাম মনমোহন তানেজা। রয়টার্স তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।

তবে গত অক্টোবরে তিনি রয়টার্সের কাছে দাবি করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ ভুয়া এবং ভুয়া ব্যক্তির করা’।

“যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ পাঠাতে পারে।”

রয়টার্স স্বাধীনভাবে ঘুষের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

কফ সিরাপ সেবনে গাম্বিয়ায় শিশুমৃত্যুর ঘটনার পর গত বছর অক্টোবর থেকে বন্ধ আছে মেইডেন ফার্মা। সরকার সেটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এখন কারখানাটির সংস্কার কাজ চলছে এবং নরেশ কুমার গওয়াল কর্তৃপক্ষকে সেটি পরীক্ষা করতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যেন তিনি কারখানাটি আবার চালু করতে পারেন।

তিনি বলেন, “কারখানার কোনো সমস্যা ছিল না, তারপরও যেহেতু তারা কিছু বিষয় তুলে ধরেছে, আমরা সেগুলো সংশোধন করেছি।

“আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেভাবে বলছে আমরা ঠিক সেভাবেই সব কিছু করছি। তার বাইরে আমরা আর কি বা করতে পারি।”

কারখানা চালুর বিষয়ে জানতে রয়টার্স থেকে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি।

তবে এ বিষয়ে জানা আছেন এমন দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেইডেন ফার্মাসহ মোট যে তিনটি ওষুধ কোম্পানি, যাদের নাম গাম্বিয়া, উজবেকিস্তান ও ক্যামেরুনে অন্তত ১৪১ শিশুর মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়েছে সেগুলোর করখানা চালু করার বিষয়ে সরকার কোনো তাড়াহুড়ো করতে চায় না।

তাদের একজন আরো বলেছেন, অন্তত আগামী বছর মে মাসে জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার কারখানা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে না। কারণ, তাতে ভোটারদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে।

বার্তা বাজার/জে আই