শিক্ষার্থীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেন্ডার সংবেদনশীল শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সময় পাঠ্যপুস্তকে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অধ্যায় থাকলেও তা পড়ানো হয় না বলে জানান তারা। এতে শিক্ষার্থীদের সচেতনতার অভাব রয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ তাদের।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে দুই দিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ে তরুণ সমাজের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক আয়োজিত মতবিনিময় সভার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রাণালয়ের উপসচিব (যুব শাখা) মোহাম্মাদ সিরাজুর রাহমান ভূঁইয়া বলেন, স্কুল পর্যায়ে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে এবারের এ উদ্যোগটি একটি সুস্থ জনগোষ্ঠী নির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারবে। সে কারণে কর্মসূচি শুরুর পর এটিকে সঠিক মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসি ও এএইচ) ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, দেশে এখন থেকে ২০-২৫ বছর আগের তুলনায় সাধারণ জনগণের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একসময় পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে সচেতনতার অভাব, গর্ভবতী মায়ের যত্নে অবহেলা, বাড়ির কাছে চিকিৎসাকেন্দ্রের স্বল্পতা, দক্ষ ধাত্রীর অপ্রতুলতা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও মাতৃ ও প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বর্তমানে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুহার ও সামগ্রিক জন্মহার অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (এমসিএইচ) ড. এ এন এম মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, যৌন ও প্রজনন-স্বাস্থ্য শিক্ষা পাওয়া আমাদের সবার অধিকার। এটা মানবাধিকার, সুতরাং প্রত্যেকেরই পাওয়া উচিত। আমাদের তরুণদের জীবনকে সুস্থ ও স্বাভাবিক করাটা খুব জরুরি। কারণ, তাদের ওপর অনেক গুরুদায়িত্ব। আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে ‘এশিয়ার টাইগার’ বলা হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তরুণদের কাজে লাগাতে হবে। সে জন্য তাদের গুণগত মানসম্পন্ন ও জীবনমুখী শিক্ষা দেওয়া খুব জরুরি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. শামসুল হক বলেন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে মানবাধিকার ও লিঙ্গসমতা জড়িত বলে সরকার এরই মধ্যে এ ব্যাপারে অসংখ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে চলতি বছর থেকে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুলে বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে দেশের শিক্ষা বিভাগ। সরকারের এমন উদ্যোগের ফলে নিশ্চিতভাবেই এই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এমসিএইচ) ডা. মো. মনজুর হোসেন বলেন, অনেক স্কুল ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। কিছু কিছু স্কুলে পৃথক টয়লেট থাকলেও নেই হাইজিন কর্নার। স্যানিটারি প্যাড ডিসপোজেরও সুযোগ থাকে না। এতে ছাত্রীরা অস্বস্তিতে ভোগে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বা ডিজঅ্যাবিলিটি সম্পন্ন শিক্ষার্থীবান্ধব টয়লেট স্থাপন করতে হবে।

বার্তা বাজার/জে আই