দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। চলছে শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ। লবিং-তদবিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। প্রার্থীরা নিজ এলাকা ছেড়ে গণভবন, ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়, সংসদীয় বোর্ডের সদস্যদের বাসা-অফিসে ছুটছেন তারা। আওয়ামী লীগের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ‘তুষ্ট’ করার জন্য হেন চেষ্টা নেই, যা তারা করছেন না। দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা যেখানে যাচ্ছেন প্রার্থীরা যাচ্ছেন পিছু পিছু। যেভাবেই হোক; চাই মনোনয়ন।

তবে আসনটিতে প্রায় দুই ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও এদের মধ্যে ৫-৬ জন হেভিওয়েট প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করতে শেষ মুহূর্তে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ধারণা, আসনটিতে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেলেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যাবেন। কারণ ফরিদপুর-১ আসনটিকে বলা হয় নৌকার ঘাঁটি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ এমপি নির্বাচিত হয়েছে।

ইতোমধ্যে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে দলটি। কিন্তু ঢাকা বিভাগে এখনো দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। শনিবার না হলেও রবিবারের মধ্যে ৩০০ আসনের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর-১ আসনে ২১ জন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আরিফুর রহমান দোলন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট লিয়াকত সিকদার, বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া, কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ খান মঈনুল ইসলাম মোস্তাক, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক এআইজি মালিক খসরু, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ শামীম রেজা, ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন, শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি লায়ন সাখাওয়াত হোসেন, ইউনিভার্সিটি অব পুন্ড্র সাইন্স এন্ড টেকনোলজির সাবেক ভিসি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. লুৎফর রহমান, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির কমিটির সাবেক সদস্য ডা. গোলাম কবীর, যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার বখতিয়ার রহমান বতু, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মো. খায়ের মিয়া, ডেফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রভাষক শেখ আব্দুর রহিম ও ফরিদপুর জেলা কৃষকলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মাজারুল ইসলাম টুকু।

একাধিক সূত্র জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রায় এক বছর ধরে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা, গ্রাম, পাড়া, মহল্লা ও হাটবাজারে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। এবার নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল ছিল অনেকটা ভিন্ন। তারা সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরার পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে পুণরায় নৌকায় ভোট দেবার আহ্বান জানিয়ে গণসংযোগ করেন। জনগণের নিকট বিতরণ করেছেন লিফলেট। গণসংযোগের ধরনও ছিল ভিন্ন। বিগত সময় গণসংযোগ হলে পূর্ব থেকে জানানো হতো। সেখানে কর্মী সমার্থকরা জড়ো হতেন। প্রার্থীরা ভোটারের কর্মস্থল মাঠ, হোটেল, রেস্তোরা এমনকি চায়ের দোকানে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে গণসংযোগ করেন। নিজেরাই কথা বলেন ভোটারের সাথে আর সেই কথাবার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও করেন। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই উন্নয়নের বার্তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও উন্নয়নের পক্ষে থাকার আহ্বান করেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় নেতৃবৃন্দদের আশ্বাসে গণসংযোগ ও নির্বাচনী কার্যক্রমে মাঠে ছিলেন। তারই অংশ হিসেবে গণসংযোগের ছবি, স্মার্ট কার্যক্রমের ডকুমেন্টসহ বিভিন্ন প্রমাণ নিয়ে দলীয় টিকিটের জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন প্রার্থীরা। যদিও আগেভাগেই বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য, দলীয়ভাবে গোপনীয় তথ্য ও প্রার্থীর আমলনামা দলীয় সভানেত্রীর হস্তগত হয়েছে। সেই আমলনামার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় যার জনসমর্থন আছে, ক্লিন ইমেজে যে এগিয়ে থাকবেন তাকেই দলীয় টিকিট দেয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সূত্র জানিয়েছে। তবে কেউ কেউ নিজের আমলনামা নিয়ে শঙ্কিতও রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্ট আসনের কয়েকজন প্রবীণ ভোটাররা জানান, জনগণের সাথে যার সম্পর্ক আছে। দলীয় কর্মকাণ্ডে যার অবদান রয়েছে তাকে প্রার্থী করলে ভোটারদের মাঝে স্বস্তি আসবে।

কয়েকজন নতুন ভোটার জানান, প্রযুক্তির ব্যবহারে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। উন্নয়নের সাথে প্রযুক্তির সম্পর্ক বিদ্যমান। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে তেমন প্রার্থী তারা আশা করেন।

বার্তাবাজার/এম আই