কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত জুরাইয়ের হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জাফর আহমদ। অতচ হত্যাকন্ডের দেড় মাস গত হলেও মূল হুতা দুর্ধর্ষ এনাম মেম্বার সহ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃংখলা বাহিনী। হত্যা মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বীরদর্পে জনসমাবেশে তার উপস্থিতি দেখে আতংক ছড়িয়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে এবং চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে নিহতের পরিবার। এরপর থেকে জাফর আহমদ সর্বসাধারনের জন্য অনিরাপদ বলে ধারণা জন্ম নিচ্ছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।

গত শনিবার (১৮ মে) সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারনা ও সমাবেশে এনামুল হক মেম্বারকে জাফর আহমদ পাশে ঘনিষ্ট ভাবে বসা দেখা যায়। জাফর আহমদ টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নিহত জুবাইয়ের পরিবারের অভিযোগ, এখনো আইনশৃংখলা বাহিনী জুবাইয়ের হত্যাকারিদের গ্রেফতার করতে পারেনি। অতচ একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে জাফর আহমদ জুবায়েইর হত্যা মামলার প্রধান আসামী এনামুল হক মেম্বারের সাথে বসে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন। যেখানে তিনি সহযোগীতা করে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে আইনের হাতে তুলে দেয়ার কথা। সেখানে উল্টো আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। আমরা মনে করি এসব নেতাদের চাপে আইনশৃংখলা বাহিনী আসামীদের গ্রেফতার করছেনা।

সূত্র বলছে, বিগত সময়ে জাফর আহমদ উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালীন এনাম মেম্বার সবচেয়ে বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠেন। মূলত জাফর আহমদের ছত্রছায়ায় থেকে ভয়ংকর অপরাধীর খাতায় নাম লিখান।

কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, তাকে গ্রেফতারে পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কোন নেতার আশ্রয়ে থেকে কোন অপরাধী আইনের হাত থেকে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। যেসব নেতা অপরাধীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদেরকেও চিহ্নিত করা হবে। আমরা তাকে খুব শিগগির আইনের আওতায় আনবো।

সুশীল সমাজ প্রতিনিধি ও রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মুজাম্মেল হক বলেন, যে জনপ্রতিনিধি এলাকার মানুষের জন্য নিরাপদ তাকেই ভোট দিয়ে জনগণ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেন। একজন আত্মস্বীকৃত মাদক কারবারী ও হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে যিনি আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন তিনি কখনো সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ হতে পারেন না। আমরা জাফর আহমদের এমন কর্মকান্ডকে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করলাম।

এই বিষয়ে জানতে জাফর আহমদের মুটোফোনে বারবার কল করেও লাইন কেটে দেওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এনাম মেম্বারের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সহ এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানায় ৩ ডজন মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। জুবাইর হত্যার আগে নাজিরপাড়ার ছিদ্দিক আহমদ নামের এক ব্যক্তির দুই হাত কেটেনেয়ার ঘটনায় সে প্রধান আসামী। সমাবেশের পর থেকে আনারস প্রতিকে ভোট দেয়ার জন্য এলাকার সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও জানিয়েছে ওই এলাকার ভোটাররা।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও টেলিফোন প্রতিকের প্রার্থী নুরুল আলম বলেন, জাফর আহমদ একজন তালিকাভূক্ত মাদক কারবারী। তারা স্বামী-স্ত্রী দুই জনেই দুদকের মামলার আসামী। তার তিন ছেলেই মাদকের সাথে জড়িত। এদের মাঝে দিদারুল আলম আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে মোটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনিও আত্মস্বীকৃত মাদক কারবারী। গোটা দেশ ব্যাপী মাদকের আগ্রাসনে এই পরিবারটির ভূমিকা শীর্ষে রয়েছে। তার সাথে রোহিঙ্গা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, খুনিদের সাথে উঠাবসা বহু পুরানো। সুতরাং তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় খুনি, সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন অপরাধী ছাড়াতো ভালো মানুষ অংশগ্রহন করবে না।

কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জাফর আহমদের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদক কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, জাফর আহমদ জনপ্রতিনিধি থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৯ হাজার টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা রয়েছে একটি।