গত শতাব্দীর সত্তর দশকে বাংলা সাহিত্যে যে ক’জন কবি সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন তাদের একজন শ্লোগানের কবি নাজমুল হক নজীর। আজ ২৩ নভেম্বর তার ৮ম প্রয়াণ বার্ষিকী। ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে রাজধানী ঢাকাতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে পাড়ি জমান অনন্তের পথে।
বরেণ্য এই কবি ও সাংবাদিক ১৯৫৫ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিয়ালদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
নাজমুল হক নজীর গেল শতাব্দীর সত্তর দশকের শক্তিমান কবি। কবিতার শব্দচয়ণে স্বতন্ত্র, সারল্যের ও জীবন দর্শনের অপূর্ব সমন্বয় করেছেন এই কবি। স্বাধীনতার পর পঁচাত্তর-পরবর্তী পট পরিবর্তনে আশাহত কবি সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে তার কলম চালিয়েছেন নিরন্তর। গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনিমার্ণের আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন কলমযোদ্ধা।
কবি’র ৯টি কাব্যগ্রন্থ, ৩টি ছড়া, ১টি ইতিহাস গ্রন্থ, ১টি সম্পাদিত গ্রন্থ, নির্বাচিত কবিতা ও কবিতা সমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ নোনা জলের বাসিন্দা, স্বৈরণী স্বদেশ, স্বপ্নবাড়ি অবিরাম। সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যে মতুয়া মতবাদে অনুসারীগণের জন্য কবি বেশকিছু গান লিখেছেন।
কবি’র লেখা আয়নায় আপন অবয়ব, নোনা জলের বাসিন্দা, ভোর হতে আর কতোক্ষণ, প্রেমের দাবিতে বলছি বাঙালির ছাড়পত্র অনন্যার জন্য গীতিকাব্য কবিতাগুলো আজও পাঠককে আন্দোলিত করে ।
কবি’র সবচেয়ে আলোচিত কাব্যগ্রন্থ ‘নোনা জলের বাসিন্দা’। এছাড়া ‘স্বৈরিণী স্বদেশ’, ‘কালো জোছনার এক চুমুক’, ‘কার কাছে বলে যাই’, ‘ঘুরে দাঁড়াই স্বপ্ন পুরুষ’, ‘স্বপ্ন বাড়ি অবিরাম’, ‘এভাবে অবাধ্য রঙিন’, ‘ভিটেমাটি স্বরগ্রাম’, ‘বকুল ভেজা পথঘাট’ প্রভৃতি তাঁর কাব্যগ্রন্থ। ‘সাধনার ফসল’, ‘আবার শ্লোগান’, ‘ইষ্টি কুটুম মিষ্টি কুটুম’ কবি’র ছড়ার বই। সম্পাদিত গ্রন্থ- গাজী খোরশেদুজ্জামানের কিশোর কবিতা। ফরিদপুর অঞ্চলের ইতিহাস বিষয়ক গবেষণা গ্রন্থ ‘আমাদের ফরিদপুর-১ অঞ্চল’।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কবির জীবনী থেকে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে তিনি কখনো কোন রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা নেননি এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বরণের পর তিনি নিজেকে আর মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেননি।
পেশাগত পরিচয়ে নাজমুল হক নজীর সংবাদপত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন পাক্ষিক নজীর বাংলা’র প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। দেশে ও দেশের বাইরে লিটল ম্যাগাজিনে কবিতা লিখেছেন নিয়মিত। প্রথম কবিতা ‘হাওয়া থেকে পাওয়া’ ও প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘স্বৈরিণী স্বদেশ’।
সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। এর মধ্যে রয়েছে রাহিলা সাহিত্য পুরস্কার, নজরুল পদক কবি শামসুর রাহমান স্মৃতি পুরস্কার, কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস স্মৃতি পদক, শ্রী হরিদর্শন পুরস্কার, আমীর প্রকাশন সাহিত্য পুরস্কার, গীতিকার ক্লাব সম্মাননা, এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন সম্মাননা, মেরিট অব ডিএক্স পুরস্কার, নির্ণয় কবি বাবু ফরিদী স্মৃতি পদক, মির্জা আবুল হোসেন পদক ও পাঠক আন্দোলন বাংলাদেশ সাহিত্য পুরস্কর প্রভৃতি।
বার্তা বাজার/জে আই