চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল প্রসূতি মা ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। এটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ও উন্নত চিকিৎসার জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি হাসপাতাল। বঙ্গোপসাগরের জোয়ার ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে প্রায় প্রতি বছরই প্রবল বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলা পানিতে তলিয়ে যায়।

হাসপাতালটির নিচতলায় রয়েছে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, ইএনটি ও ৮০ শয্যার শিশু ওয়ার্ড। জোয়ারের পানি আসলে শিশু রোগীদের উপরের তলার ওয়ার্ডে স্থানান্তর করতে হয় গাদাগাদি করে। গাদাগাদি করার দরুন স্বজন ও শিশু রোগীদের করোনাতে আক্রান্ত হওয়ার একটা জোর সম্ভাবনা থাকে যে কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম পোহাতে হয়!

এই বন্যার পানির কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও লোকজনকে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে প্রান্তিক এলাকার শিশুদের সমস্যা নিয়ে আসা রোগীরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। তাছাড়া অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি শহরের নালা-নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশনের সাথে মিশে গিয়ে অতিমাত্রায় বিষাক্ত হয়ে পড়ে! ফলে বন্যার এই নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সেখানে সু-চিকিৎসার জন্য আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন। যেটা সরাসরি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে!

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানাচ্ছে, বাংলাদেশে এক কোটি নব্বই লাখেরও বেশি শিশুর জীবন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সরাসরি ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়া বর্ষায় সড়কের নানা ঝক্কি পেরিয়ে নগরে এলেও অনেক সময় জলাবদ্ধতার কারণে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না রোগী ও তাদের স্বজনরা। মাঝে মধ্যে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি ডিঙিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জলাবদ্ধতার কারণে নিচতলার জরুরি ও বর্হিবিভাগে সেবা দিতে পারছেন না কর্তৃপক্ষ। পরে বাধ্য হয়ে সেবা না নিয়েই ফিরতে হয় তাদের।

তবে এই সময়ে বাংলাদেশে কোভিড মহামারীর প্রকোপ বৃদ্ধির সাথে সাথে ডেঙ্গুর প্রকোপ ও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে! সাথে এটি একটি কোভিড মহামারী নিবেদিত হাসপাতাল। এই মহামারীর কঠিন সময়ে যেখানে একজন অসুস্থ মা তার সন্তানকে ডাক্তার দেখানোর জন্য প্লাবিত হাসপাতালের লবিতে অপেক্ষা করছেন। তারা যে অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল, মা তাতে মর্মাহত হয়ে তার সন্তানকে আগলে ধরে রেখেছে।

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. মোশারফ হোসাইন জানান, ‘আগে এখানে পানি উঠতো না। ২০১০ সালের পর থেকে পানি ওঠা শুরু হয়। এখন যতই দিন যাচ্ছে ততই হাসপাতালে পানি ওঠার প্রবণতা বাড়ছে। আগে গোড়ালি পর্যন্ত পানি উঠতো, এখন কখনও কখনও কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়।

১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু। ইউনিসেফের শিশুদের জন্য জলবায়ু ঝুঁকি সূচক বা চিলড্রেনস ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩ দেশের মধ্যে ১৫তম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম অরক্ষিত দেশের একটি। জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে সামাজিক সমস্যাগুলো প্রকট করছে তাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কম বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; অন্ধকার এই যাত্রায় নিরাপদ থাকছে না গর্ভের শিশুও। এই এলাকার আশেপাশে চিকিৎসার জন্য এর চেয়ে ভালো প্রসূতি ও শিশু হাসপাতাল নেই এবং এত এত সমস্যা থাকার পরেও এই বিখ্যাত হাসপাতাল মানুষের আস্থা ও ভরসার একমাত্র প্রতীক।

আলোকচিত্রী : জিয়াউল হক

বার্তাবাজার/এম আই