কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্তে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন । ১৫ ঘন্টা পর উদ্ধার কাজ শেষ হওয়ায় ঢাকা-চট্রগ্রাম-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা ভৈরবে এসে মাঠ পর্যায়ের তদন্তের কাজ করবেন বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। এখন পর্যন্ত ১৬টি লাশের পরিচয় পাওয়ায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অফিস আদেশ জারির সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

ঢাকা বিভাগীয় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে থাকছেন ঢাকার বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা। এছাড়াও সদস্য হিসেবে থাকবেন বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লোকোমেটিভ, বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এবং বিভাগীয় সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী। এবং চট্টগ্রাম বিভাগেও একটি ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রেলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) মো. শহিদুল ইসলাম। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকছেন চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জাকির হোসেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার আরমান হোসেন, সিএসপি তুষার এবং চিফ মেডিকেল অফিসার আহাদ আলী সরকার।

অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার বিকেলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুবেল মাহমুদ।

আজ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টায় দুটি রিলিফ ট্রেনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বগি দুটি লাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

উভয় লাইন পুরোপুরি প্রস্তুত করার পর সকাল ৭টা থেকে ডাউন এবং আপ উভয় লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে রাতে এক লাইনে ট্রেন চলাচল করে। বিভিন্ন স্টেশনে আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন আটকে থাকায় ট্রেন চলাচল এবং নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল স্বাভাবিক হতে এক দুইদিন সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন রেল কতৃপক্ষ।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে বলে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. ইউসুফ।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিম পাশে আউটার সিগনালের সামনে ক্রসিংয়ের সময় সিগনাল অমান্য করে সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় এগারোসিন্ধুর ট্রেনের পিছনের দুটি বগিকে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে ভয়াবহ দূর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও শতাধিক ট্রেনযাত্রী আহত হয়। ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের সাথে রেলওয়ে পুলিশ, বেঙ্গল পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি, আনসারসহ রেলওয়ে ও প্রশাসনের লোকজন উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে দুটি রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধার কাজে যোগ দিয়ে ভোর সাড়ে ৪টায় লাইন থেকে বগি দুটি সরাতে সক্ষম হয়। বগি দুটি দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় আলাদা আলাদা কেটে সরানো হয়।

এর আগে রাত সাড়ে দশটার দিকে মালবাহী ট্রেনটিকে স্টেশনে সরিয়ে আনার পর ট্রেনটি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ভৈরব স্টেশন ছেড়ে যায় এবং রাত ১১টার পর নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনে এসে যাত্রা বিরতীর পর নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে ভৈরব স্টেশন ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দূর্ঘটনায় পতিত এগারোসিন্ধুর ট্রেনটির ক্ষতিগ্রস্ত বগি গুলো আলাদা করার পর দুর্ঘটনাকবলিত স্থান থেকে ৭টা ৫৫ মিনিটে এগারসিন্ধুর ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের আশঙ্কা ছিল বগি গুলোর নিচে আরো অনেক যাত্রী আটকা পড়ে মারা যেতে পারে। দুটি বগি সরানোর সময় বগির নিচ থেকে আর কারও মরদেহ পাওয়া যায়নি । উদ্ধার কাজ শেষ হওয়ায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১৮ জন। আহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা-নোয়াখালী রেলপথে সাত ঘণ্টা ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। সকাল রাতে একটি লাইনে ট্রেন চলাচল করতে পারলেও উভয় লাইনে সকাল সাতটায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এই ঘটনায় মালবাহী (কন্টিনার) ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেল প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটি আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বার্তা বাজার/জে আই