সামরিক আদালতে বেসামরিক নাগরিকদের বিচার অসাংবিধানিক ঘোষণা করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট সেনাবাহিনীর হাতে আটক দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শতাধিক সমর্থকের বিচার কার্যক্রম আটকে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা সোমবারের এই রায়কে গণতন্ত্রের জয় বলে বর্ণনা করেছেন।

গত মে মাসে ইমরান খানকে আটকের জেরে তার দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই) এর সমর্থকরা দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। দুই দিনের ওই আন্দোলনে পিটিআই সমর্থকরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি স্থাপনায় হামলা চালায়। সে সময় সেনাবাহিনী ইমরানের কয়েকশ সমর্থককে আটক করেছিল। পরে অনেককে ছেড়ে দেওয়া হলেও এখনো সামরিক আদালতে শতাধিক সমর্থকের বিচার চলছে।

নানা মানবাধিকার সংস্থা থেকে যে বিচার প্রক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা করা হচ্ছিল। প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল সামরিক আদালতে বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে।

পিটিআই থেকে সুপ্রিট কোর্টে এ বিষয়ে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়। যার রায় এলো সোমবার। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ফলে এখন ইমরান সমর্থকদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো বেসামরিক আদালতে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

পিটিআই এর আইনজীবীদের একজন আইতজাজ আহসান বলেন, “আজকের রায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই রায় পাকিস্তানে সংবিধান, আইন এবং বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।”

অন্যান্য আইন বিশেষজ্ঞরাও ‘সাহসী’ এই রায়ের প্রশংসা করেছেন।

জিও নিউজকে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এর সাবেক প্রেসিডেন্ট আহসান ভুন বলেন, “এই রায় সম্পূর্ণ সঠিক এবং সংবিধানের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে।”

আইন বিশেষজ্ঞরা প্রশংসা করলেও কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এ রায়ের সমালোচনা করেছেন। শাহবাজ শরীফ সরকারের সিদ্ধান্তেই ইমরান সমর্থকদের বিচার সামরিক আদালতে শুরু হয়েছিল।

বালুচিস্তান প্রদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথ্যমন্ত্রী জান আচাকজাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্স এ বলেন, যদিও তিনি আদালতের এই রায়ের প্রতি সম্মান জানান। কিন্তু এটা তার কাছে ‘হতাশাজনক’।

বলেন, “এই পিটিশন রাজনৈতিক সমর্থন জানানো ছাড়া আর কিছু নয়।”

গত বছর পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে গিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ইমরান খান। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন।

সোমবারও তার বিরুদ্ধে গোপন নথি ফাঁস করার একটি নতুন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানায় বিবিসি।

স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনী প্রভাবশালী খেলোয়াড়। যে কারণে দেশটিতে এখন পর্যন্ত কোনো প্রধানমন্ত্রী নিজের মেয়াদ শেষ করে সাংবিধানিক উপায়ে দায়িত্ব হস্তান্তর করার সুযোগ পাননি।

নানা কারণে কয়েক মাস পিছিয়ে আগামী বছর জানুয়ারিতে দেশটিতে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর এ সময়ে সেনাবাহিনী আবারও মাঠে নেমে পড়েছে বলে ধারণা অনেকের। এরইমধ্যে লন্ডনে চার বছরের স্বোচ্ছা নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। ইমরান ক্ষমতা ছাড়ার পর তার দল পিএমএল-এন এর নেতৃত্বে গঠিত বিরোধী জোট এতদিন পাকিস্তানে সরকার পরিচালনা করে আসছিল। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নওয়াজের ভাই শাহবাজ শরীফ।

নওয়াজ দেশে ফেরার আগেই পিএমএল-এন ঘোষণা করে, পরবর্তী নির্বাচনে তাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নওয়াজ। যদিও দুর্নীতির মামলায় তিনি সাত বছরের সাজা প্রাপ্ত এবং সেই সাজার মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি।

কয়েক মাস কারাভোগের পর তিনি চিকিৎসার কথা বলে জামিন নিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে লন্ডন চলে যান। এখন সেনাবাহিনীর যোগসাজসেই তিনি দেশে ফিরেছেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।