ঢাকা মহানগর বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত এক দফা গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ গতকাল শনিবার (৯ সেপ্টেবম্বর) সন্ধার দিকে পল্টন ভিক্টোরিয়া হোটেলের সামনে এ ঘটনা ঘটে৷ এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়।

সংগঠনের একটি সূত্র জানায়, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিকে ঘিরে মিছিলের সামনে অবস্থান করাকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়৷ তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সামান্য কয়েকদিনের মধ্যে এমন বিশৃঙখল ও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করে দায়িত্বশীলরা।

জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের মিছিল শুরুর আগেই ইউনিটের সভাপতি আবু হুরায়রা সহ-সভাপতিদের সামনের সাড়িতে এবং যুগ্ম সম্পাদকদের পর্যায়ক্রমে পেছনে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়। এত যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। ঘটনাক্রমে সাধারণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম তালুকদার বিন্দুর অনুসারী হাবিবুর রহমান সভাপতি হুরায়রা সাথে বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে সভাপতির অনুসারীরারা ছত্রভঙ্গ হয়ে হাবিব সহ একাধিক নেতাকর্মীকে মারধর করেন।

পরবর্তীতে মিছিল শেষে নয়াপল্টনস্থ ভিক্টোরি হোটেলের সামনে সভাপতি অনুসারীদের উপর সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা পাল্টা আক্রমণ করলে সভাপতি অনুসারীরাও আক্রমণ প্রতিরোধ করে। এতে করে ভয়াবহ সংঘর্ষ বেঁধে যায় ছাত্রদলের ইউনিটের মধ্যে ৷

উক্ত ঘটনায় আহতরা হলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক সুলাইমান কবির আরিফ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আবু হোরায়রা, সহ-সভাপতি
ফেরদৌস মাহমুদ রুবেল, রুহুল আমিন, সাইফুল ইসলাম (সোহেল), যুগ্ম-সম্পাদক আরাফাত সিদ্দিকী, আল-আমিন বাবলু, হাবিবুর রহমান হাবিব, এইচ.আর সংগ্রাম, একে এম জাহিদুল ইসলাম তালুকদার, সমাজসেবা সম্পাদক মোঃ রাকিব হাসান। এছাড়াও আইন সম্পাদক এডভোকেট ইয়াসিন আরাফাত লিয়নের অবস্থা আশঙ্কা জনক বলে জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একজন যুগ্ম সম্পাদক জানান, সংঘর্ষ হওয়ার মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি৷ তুচ্ছ একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কারন এত অল্প সময়ের মধ্যে লাঠিসোটা নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হওয়া কখনোই পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া সম্ভব নয় বলেও তিনি জানান।

জানতে চাইলে হামলার শিকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানান, বাকবিতান্ডা হচ্ছিলো অবস্থানকে কেন্দ্র করে। হঠাৎ আক্রমন হবে এটা বুঝতে পারিনি। আমি চাই বিষয়টি নিয়ে সাংগঠনিক ভাবে তদন্ত করা হোক এবং দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি আবু হুরায়রা জানান, আমরা শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দুটি সারীবদ্ধ কাতারের মাধ্যমে মিছিলটি এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। তবে বিষয়টি ব্যক্তিগত দ্বন্দের পর্যায়ে কিভাবে গেল এবং নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা করলো সেটা আমার কাছে এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আশাকরছি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি দ্রুত নজরে আনবেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

এসব বিষয়ে জানতে কেন্দ্রিয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করা হলে তিনি মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। তবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার জন্য বিব্রত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে দলের ক্রান্তিকালে ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে যেভাবে একের পর এক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তা রীতিমত ভাবনার উদয় করছে জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রের প্রভাবশালী ও সাবেক ছাত্র নেতা বলেন, আমরা পুরো কমিটিটা ঢেলে সাজানোর জন্য ইতিমধ্যে আভ্যন্তরীন ব্যবস্থাপনায় রয়েছি। আশকরি দ্রুত এর প্রতিফলন দেখা যাবে। কারন, এই মুহুর্তে আন্দোলন বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আমরা কোন ভাবেই কামনা করছি না।

ঘটনাটির পূর্বে শনিবার দুপুরে ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন বিভিন্ন থানা ও ইউনিটের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। তাদের বক্তব্য, দলের তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতৃবৃন্দের প্রতি অসাদাচরণ একটি সংগঠনের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়। আমরা চাই সুষ্ঠু নেতৃত্বে সংগঠন এগিয়ে যাক। এর জন্য যদি নিজেদের সংগঠনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে হয়, আমরা তাতেও রাজী। তবুও সংগঠন তার শৃঙ্খলায় ফিরে আসুক এই কামনা করছি।

 

ই.এক্স/ও.আর/বার্তা বাজার