কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের শ্যামপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে লোড ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা অরুণ আল আজাদ, তিনি ভৈরব উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।

স্থানীয় গ্রামবাসী লোকজন জানান, গত দেড় সপ্তাহ ধরে খাল খননের নামে শ্যামপুর এলাকায় মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেড নৌকায় বালু বিক্রি করেছে প্রভাবশালী এক যুবলীগ নেতা অরুণ আল আজাদ। এই কাজে সহযোগিতা করছেন আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার রাশিদ মিয়া।

খাল খননের দোহাই দিয়ে গত তিনদিন ধরে শ্যামপুর গ্রাম রক্ষা বাঁধের ৫০গজ দূরে একটি ও ৫০০গজ দূরে অন্য একটি লোড ড্রেজারে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করায় গ্রামবাসী কয়েক বার নিষেধ করার পরও বালু উত্তোলন বন্ধ না করায় ৬সেপ্টেম্বর, বুধবার দুপুরে শ্যামপুর গ্রামবাসী লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারকে ধাওয়া করলে ড্রেজার নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

অভিযুক্ত ওই প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন বলে স্থানীরা অভিযোগ করেন।

গ্রামবাসী আরও জানান, এই গ্রামটি ভৈরব উপজেলার একটি অবহেলিত গ্রাম। কোনো রাস্তা না থাকায় বর্ষাকালে নৌকা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার কোন উপায় নেই। বর্ষা ছাড়াও কাদা মাটি দিয়ে হেঁটে প্রয়োজনীয় কাজে গকুলনগর বাজার, আনন্দ বাজার ও শহরে আসতে হয় তাদের। ওই গ্রাম রক্ষায় উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সায়দুল্লাহ মিয়া ও স্থানীয় সাংসদ নাজমুল হাসান পাপনের উদ্যোগে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কিছু অসাধু প্রভাবশালী ব্যক্তি বাধের পূর্বপাড়ের ৫০গজ দূরে ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদী গর্ভে বিলীনে হুমকির মুখে পড়েছে গ্রামটি। অবহেলিত এই গ্রাম রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী ও স্থানীয় প্রশাসন হস্তক্ষেপ কামনা করছেন নিরীহ গ্রামবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খনন প্রকল্পের আওতায় শ্যামপুর মেঘনা নদীর মোহনা থেকে আগানগর পর্যন্ত (খনন যন্ত্র) ভেকো দিয়ে খাল খননের কথা থাকলেও গুডম্যান নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সময়মতো কাজ শেষ না করায় নতুন করে ওই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই বর্ষার মৌসুমে ভেকোর পরিবর্তে যত্রতত্রভাবে লোড ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেড নৌকায় বিক্রি করছেন তারা। অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে গ্রামটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার শংকায় শ্যামপুর গ্রামবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।

এবিষয়ে আগানগর ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার রাশিদ মিয়া জানান, আমি যুবলীগের রাজনীতি করায় নেতা অরুণ ভাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন জায়গাটা ড্রেজারের লোকজনকে দেখিয়ে দেয়ার জন্য। অরুণ ভাই বলেছে কাগজপত্র সব লিগ্যাল আছে, তাই আমি গিয়েছিলাম। ড্রেজারে বালু উত্তোলন এখন বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক অরুণ আল আজাদ বলেন, সরকারি নিয়মনীতি মেনে বরাদ্দ পাওয়া খাল খননের কাজটি আমরা করছি। কাগজপত্র সব ঠিক আছে। গুডম্যান নামে টাঙ্গাইলের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে আমরা খাল খননের কাজটির সময় সমাপ্ত করতে না পেড়ে নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরীক্ষামুলক ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করতেছিলাম মুলত খাল খননের জন্য। বালু বিক্রির অভিযোগটি সঠিক নয়। আমাদের একটাই ভুল হয়েছে উত্তোলনকৃত বালু নিলামের কাজটি শেষ না করে ড্রেজার লাগানো। এলাকার জনগণ বাধা দেয়ায় আমরা বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, শ্যামপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে কাজটি চলমান রয়েছে, সেটি একটি দীর্ঘ পক্রিয়া। গত ১বছর আগেই কাজটি শুরু হয়ে ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি সময়ের মধ্যে সমাপ্ত করতে পারেনি। পরে তারা কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ে আসেন। আমাকে তারা বিষয়টি অবগত করলে, আমি তাদের বলেছি বিধি অনুযায়ী যেভাবে খাল খনন করার কথা, ঠিক সেভাবেই যেন খনন করে।

সম্প্রতি একটি অভিযোগ পেয়েছি, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সিকিউভেটর দিয়ে না কেটে ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করতেছে। যেটা বালি ব্যবস্থাপনা আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ড্রেজারে বালি উত্তোলন করতে হলে অবশ্যই সরকারের অনুমতি নিতে হবে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সর্তক করেছি, সিডিউলে যেভাবে নিয়ম রয়েছে, সেভাবেই যেন কাটেন। এর বাহিরে যদি অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করে তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বার্তাবাজার/এম আই