ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় রাত-দিন জেলেরা নদীতে পড়ে থাকলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা। কেউ কেউ যৎসামান্য মাছ পেলেও তা বিক্রি করে নৌকা-জালের খরচও উঠছে না। এতে সংকটে পড়েছে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলে পরিবারগুলো।

সরেজমিনে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের দিগনগর মধুমতি নদীর খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা যায়, রাতভর জেলেরা মাছ ধরে নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরছেন। রাতের ধরা মাছ তারা বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। সারারাত জাল টেনে ধরা মাছ দেখে তারা হতাশ। কারণ এ মাছ বিক্রি করে তাদের নৌকা-জালের খরচই উঠছে না। অনেকে আবার নৌকা পাড়ে রেখে বেকার বা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

এসময় কথা হয় উপজেলার পবনবেগ মালোপাড়ার প্রবীণ জেলে পঙ্কজ মালোর (৫৬) সঙ্গে। প্রায় ৪০ বছর ধরে মাছ শিকার করছেন। শৈশবে বাবা–চাচাদের সঙ্গে দল বেঁধে মধুমতি নদীতে মাছ শিকার করতেন। মধুমতি নদীই ছিল তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। তবে বার্ধক্যে এসে মধুমতি নদীতে মাছের খোঁজে রাত-দিন পড়ে থাকলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত মাছ।

তিনি জানান, ‘গত কয়েকদিন ধরে সারারাত নদীতে থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মাছ পেয়েছে। চার সদস্যের পরিবার তার। মাছ বিক্রি করেই তার সংসার চলে। এখন পঙ্কজ মালোর চোখেমুখে চিন্তার ছাপ।’

বিজয় মালো, অসিম, নিগম নামে আরও কয়েকজন মাঝির সাথে কথা হলে তারা জানান, ‘সারারাত নদীতে জাল ফেলে মাছের অপেক্ষায় থাকতে হয়। যে মাছ জালে আসে তা দিয়ে নৌকা-জালের খরচই উঠে না।বাজারে চাল-ডালসহ দ্রব্যমূল্যের যে হারে দাম বেড়েছে তাতে আমাদের সংসার চলছে না।’

উপজেলার দরুণা গ্রামের মাঝিপাড়ার বাসিন্দা সদানন্দ বিশ্বাস আরেক জেলে জানান, ‘আগে তিনি বারাশিয়া নদীতে ভেসাল জাল দিয়ে মাছ শিকার করতেন। কিন্তু পাট জাগ দেওয়ার কারণে বারাশিয়া নদীর পানি পচে গেছে। বর্তমান বারাশিয়া নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। এখন তিনি পুকুরের চাষের মাছ বিক্রি করে কোনরকম সংসার চালান।’

গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম বার্তা বাজার’কে জানান, ‘এ ইউনিয়নের প্রায় ২০টি পরিবার মধুমতি নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবার নদীতে জেলেদের জালে খুবই কম মাছ ধরা পড়ছে। এ জন্য জেলেদের খুব দুর্দিন যাচ্ছে। তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু সরকারিভাবে কোনও বরাদ্দ না আসায় তাদের সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না।’

মাছ কমে যাওয়ার বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) লুৎফার রহমান বার্তা বাজার’কে বলেন, একধরনের অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ী নদীতে চায়না দুয়ারী, কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। এতে মাছের বংশবিস্তার ও বৃদ্ধি হচ্ছে না। অবশ্য এরজন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে নদীতে মাছ কমতে থাকলে জেলেরা আর্থিক সংকটে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। নদীতে মাছ কম ধরা পড়ায় অনেক জেলে হতাশার মধ্যে পড়ে গেছেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। কোনও সরকারি সহায়তা এলে জেলেদের মাঝে দেওয়া হবে।’

বার্তাবাজার/এম আই