নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধের জেড়ে পুলিশের উপস্থিতিতে হতাহত, বসতবাড়ীতে অগ্নি সংযোগ আহত ১০। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ আগষ্ট) উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের সোনামণির ডাঙ্গায় বেলা সাড়ে ১২টায় এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৬৫৪০নং কবলা দলিল মূলে বিএস ৫৮৪৮দাগের ২৮শতক জমির দাবিদার আইনজীবী মামুনুর রশীদ পাটোয়ারী বাদী হয়ে রশিদুল ইসলামসহ ৫জনকে বিবাদী করে ১৪৪/৪৫ ধারা অনুযায়ী কোর্টে মামলা (মামলা নং ১৮৭/২৩) দায়ের করেন। এরেই প্রেক্ষিতে উক্ত জমিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার অবনতি না ঘটার নোটিশ দেয় আদালত। কিন্তু উভয় পক্ষ আদেশ অমান্য করে জোর করে জমি নিজেদের দখলে নেয়ার দলবদ্ধ ভাবে চেষ্টা করে। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশ বাদী-বিবাদীকে জমির কাগজ পত্র নিয়ে থানায় হাজির হতে বলে। উভয়পক্ষ পুলিশের প্রস্তাব মেনে নেয়। পুলিশ ও বাদী-বিবাদীর আলোচনা চলাকালে হঠাৎ মামুনুর রশীদ ও বাবুলের বাড়ীর প্রবেশ পথে উভয় পক্ষের অন্তত ১০০জন নারী-পুরুষ লাঠি দিয়ে মারপিঠে জড়িয়ে পড়ে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে উক্ত জমিতে বসবাসকারী বাবুলের রান্নাঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য অগ্নি নির্বাপন করে।

এ ঘটনায় বাদী মামুনুর রশীদ পাটোয়ারী জানান, আমাদের জমিতে জোর করে বিবাদী দখলের চেষ্টা করে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। উভয় পক্ষের লোকজনকে কাগজ নিয়ে থানা যেতে বলে পুলিশ। আমরা তা মেনে নেই। কিন্তু ঘটনাস্থলে পুলিশের সামনে বিবাদীর সাথে কথা বলে নাউতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আশিক ইমতিয়াজ (মনি)। তার পরামর্শে হঠাৎ করে বিবাদী আমার বাবাসহ আমার পরিবারের সদস্যদের লাঠি দিয়ে মারধর করে আহত করে। বিবাদীর লাঠির আঘাতে আমার বাবার হাত ভেঙ্গে গেছে, আমার ছোট ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আমরা ৬জন গুরুত্বর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন।

বিবাদী রশিদুল জানান, আমার জমিতে জোরপূর্বক মামুন ঘর উঠাতে চায়। আমি বাধা প্রদান করে, বলি জমি নিয়ে কোর্টে মামলা চলমান এবং আমাদের মাঝে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে আমাদের জানায় এটা মামুনুর রশিদের জায়গা। এখানে সে ঘর উঠাবে তার পক্ষে রায় আছে। পুনরায় আমাদের মাঝে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ থানায় কাগজ নিয়ে যেতে বলে এবং আমরা তা মেনে নেই। এর কিছুক্ষণ পরেই বাবুলের বাড়ীর ওখান তার পরিবার ও মামুনুর রশীদের মারামারি হয়। ঘটনাস্থলেই বাবুলের বাড়ীতে আগুন সুত্রপাত ঘটে এবং তা পুলিশের সামনে। সে মুহূর্তে পুলিশ নিরব ছিলো।

এ প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদের করা অভিযোগ অস্বীকার করে নাউতারা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আশিক ইমতিয়াজ (মনি) জানান, তারা নিজেরা সবাই প্রতিবেশী। ডিমলা থেকে ওসি সাহেব আমাকে কল দিয়ে বলেন আপনার ইউনিয়নের পাশেই পুলিশ পাঠিয়েছি। একটু মিমাংসা করার ব্যবস্থা করবেন। আমি সেখানে গিয়ে দেখি পুলিশ আছে এবং খুব উচ্চবাচ্য হচ্ছে। আমি আর সেদিক না গিয়ে। ওসি সাহেবকে বললাম আপনি নিজেই আসেন। এখানে উভয় পক্ষ উত্তেজিত। আমাদের কথা কতটুকু কাজ হবে তা আমার জানা নেই। আমি এর থেকে আর বেশি কিছু জানিনা।

এ বিষয়ে বাবুল হোসেন জানান, খাস জমিতে বিগত ৩০ বছর ধরে পরিবারসহ বসবাস করছি। মামুন আমাকে নোটিশ দিয়েছে বাড়ি ভাঙার জন্য। রশিদুলের জায়গা দখল করতে গিয়ে আমার বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমাদের বেধড়ক মারধর করে। আমি ও আমার সহধর্মিণী অসুস্থ। আমাদের আরও কয়েজন আহত।

এ প্রসঙ্গে মামুনুর রশীদ পাটোয়ারীর করা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আব্দুর রশিদকে প্রশ্ন করা হলে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “মন্তব্যের কিছু নেই যা পারেন লিখবেন”। আপনি আমাকে বলেন যে এই বিষয়ে আমি কি বক্তব্য দেবো।

এ প্রসঙ্গে ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লাইছুর রহমান জানান, এ ঘটনায় তরিকুল এবং আবু তাহের নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।

বার্তাবাজার/রাহা