জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২৪টি লেগুনা আটকে রাখার ঘটনা মিমাংসা করতে চাঁদা আদায় করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নম্বর সহ-সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের (৪৩তম ব্যাচ) সাবেক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজ্জাদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী বলে পরিচিত। চাঁদা আদায়ের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রতিনিধির হাতে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার থেকে আশুলিয়া রুটে চলাচলকারী লেগুনাগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন গেইট দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে যেতে হয়। ফলে লেগুনাগুলোকে দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে চাঁদা দিয়ে হতো। তবে বিগত দুই মাস ধরে চাঁদা দেওয়া বন্ধ ছিলো। তার প্রেক্ষিতে আবারো লেগুনা থেকে চাঁদা আদায়ের নতুন চুক্তি করতে চান ছাত্রলীগের নেতারা। দিনপ্রতি চাঁদা ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০০ টাকা করতে গত ২৫ জুলাই ২৪টি লেগুনা আটকান তারা। চারদিন আলোচনার পর এক লাখ ২০ হাজার টাকায় লেগুনাগুলো ছেড়ে দেওয়ার চুক্তি হয়।

দুই মিনিট ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের দুইতলায় মসজিদের সামনে আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে চাঁদার টাকা নিয়ে আসেন লেগুনা চলাচল নিয়ন্ত্রণকারীদের মধ্যে মিন্টু গাজী ও ফজা। সেখানে আরো এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মিন্টু গাজী সাজ্জাদের হাতে তিন বান্ডিল টাকা তুলে দেন। প্রথমে সাজ্জাদ লুঙ্গির ভাঁজে টাকাগুলো রাখার চেষ্টা করেন। পরে সিঁড়ির কোণা থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে তাতে টাকা মুড়িয়ে চলে যান।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একটি সুত্র জানিয়েছে, সাজ্জাদের হাতে মিন্টু গাজী ও ফজা মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলে দেন। লেগুনা থেকে প্রাপ্ত চাঁদার টাকা ভাগাভাগিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির পক্ষে দেনদরবার করেন এক নম্বর সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ এবং সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে দেনদরবার করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক কার্যকরী সদস্য এসএম দিদারুল আলম দ্বীপ। এছাড়া চাঁদার একটি অংশ (২০ হাজার টাকা) মীর মশাররফ হোসেন হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ নেতাদের দেন।

চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিরক্ত হন লেগুনার মালিক ফজা। তিনি বলেন, ‘লেগুনা চালানো বাদ দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দিতে হয়, এমনকি পুলিশকে টাকা দিতে। এছাড়া আরো মানুষকেও টাকা দিতে হয়। এভাবে লেগুনা চালানো যায় না।’ তবে সাজ্জাদকে কত টাকা দিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে ভিডিওটি গত বছরের দাবি করে সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিন্টু গাজীর সাথে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। সেই হিসেবে সে আমাকে টাকা দেয়। যার তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আর যে ভিডিওটার কথা বলা হচ্ছে, সেটি গত বছরের। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে লেগুনা আটকে রেখে টাকা আদায়ের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

এসএম দিদারুল আলম দ্বীপ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা মিথ্যা। আমি জড়িত থাকলে তো আমারও ভিডিও ফাঁস হতো। যেহেতু সাধারণ সম্পাদকের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক, সেহেতু আমাকে বিতর্কিত করতেই হয়তো মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ এনানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটনের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।

বার্তা বাজার/জে আই