পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় আগামী ২১ জুলাই শুক্রবার রেজিস্ট্রারী মাঠে পুনরায় জনসভার তারিখ ঘোষণা করেছে সিলেট মহানগর জামায়াত। রোববার দুপুর ১২টায় নগরীর কুদরত উল্লাহ মার্কেটস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন তথ্যই দেন নগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।

তিনি জানান, গতকাল রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রারী মাঠে আজকের পূর্ব নির্ধারিত জনসভার অনুমতি না দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আমরা বিস্মিত ও হতবাক হয়েছি। ফলে আজ আমরা সংবাদ সম্মেলন করছি। জামায়াত নগরীর জিন্দাবাজার এক অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করেছিল, পুলিশী বাঁধায় সেখানে করা যায়নি এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি মজলুম সংগঠন। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশ ও জাতির যে কোন ক্রান্তিকালে জামায়াত সবসময় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানেও জামায়াত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে আছে। নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ জামায়াত নেতৃবৃন্দ ও কারান্তরীণ আলেম-উলামাদের মুক্তি, নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি রোধ, ঘন ঘন লোডশেডিং, দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধি, বিদেশে পাচারকরা টাকা দেশে ফিরিয়ে আনা ও পাচারকারীদের শাস্তি প্রদান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে সাংবাদিক দমন পীড়ন বন্ধ ও বন্ধ করে দেয়া ইলেক্ট্রনিক, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়া সমূহ খুলে দেয়াসহ জনসংশ্লিষ্ট ১০ দফা দাবিতে আজ শনিবার বেলা ২টায় সিলেট মহানগর জামায়াতের শান্তিপূর্ণ জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে এসএমপির পক্ষ থেকে জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি বলে আমাদেরকে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়। কিন্তু কোন কারণে আমাদের জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি সেই বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়।

লিখিত বক্তব্যে ফখরুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসের ৫ জুলাই সিলেট মহানগর জামায়াতের পক্ষ থেকে আজ ১৫ জুলাই সিলেটের রেজিস্টারি মাঠে জনসভা আয়োজনের লক্ষ্যে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন আমরা দেই। গতকাল শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে মৌখিকভাবে আমাদেরকে বলা হয় জনসভার অনুমতি হচ্ছেনা। পুলিশের এমন সিদ্ধান্তে আমরা হতভম্ব হই এই কারণে যে কিসের ভিত্তিতে আমাদের জনসভা করতে দেয়া হয়নি এব্যাপারে আমাদেরকে কোন কিছু বলা হয়নি। তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমরা লক্ষ্য করলাম পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে নাশকতার আশঙ্কা থেকে নাকি অনুমতি দেয়া হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতেও আমাদের সমাবেশ নিয়ে এরুপ আশঙ্কা করেছিল পুলিশ। কিন্তু জামায়াত শান্তিপূর্ণভাবে সেই সমাবেশ সফলের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে নাশকতার সাথে জামায়াতের কোন সংশ্লিষ্টতা কখনো ছিলনা, বর্তমানেও নেই, ভবিষ্যতেও এই রকম হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

ফখরুল বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ জনসভার অনুমতি দেয়া হয়নি। অথচ সভা সমাবেশ করা সকল দলের সংবিধান স্বীকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু আমাদের সেই অধিকারকে দীর্ঘদিন থেকে হরণ করা হয়েছে।এই অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে জনগণের নিকট জবাবদিহীমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সময়ের দাবী। জনগণ ১৪ সাল মার্কা বিনাভোটের এমপির নির্বাচন ও ১৮ সাল মার্কা দিনের পরিবর্তে গভীর রাতের ভোটের সরকার চায়না। জনগণের ভোটের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশ ও জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। এলক্ষ্যে সিলেট মহানগর জামায়াত আগামী ২১ জুলাই (শুক্রবার) একই স্থানে শান্তিপূর্ণ জনসভার আয়োজন করতে যাচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের স্বার্থে এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে তারা সাংবাদিক,গণমাধ্যমকর্মী,প্রশাসন ও সিলেটবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের সিলেট জেলা উত্তর আমীর আনোয়ার হোসেন খান, মহানগর নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমদ, সেক্রেটারী মোঃ শাহজাহান আলী, সিলেট জেলা উত্তর শাখার সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট আব্দুর রব, জামায়াত নেতা মাওলানা ফারুক আহমদ প্রমুখ।

বার্তাবাজার/এম আই