গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর দাম কেজিতে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা বাজারে কোথাও কোথাও আলু ১৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তাতে খুচরায় আলুর কেজি ৪০ টাকা ছাড়িয়ে দু–এক জায়গায় ৫০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহের বড় কোনো সংকট না থাকলেও অতিরিক্ত মুনাফার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়ে রাখছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা আলুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার আগে পাইকারিতে আলুর দাম ছিল প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) ১৫০ টাকার আশপাশে। তাতে প্রতি কেজি আলুর খুচরা মূল্য পড়ত ৩০ টাকা। যেটা খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৩৫ টাকায় বা তার একটু বেশি। ঈদুল আজহার পরে গতকাল সেই আলুর পাইকারি দাম দাঁড়িয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি; খুচরায় গিয়ে যা পড়ছে ৪৫ টাকায়। আর পাড়ামহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকার ওপরে; ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এসব আলু আকার ও মানে বেশ ভালো।

বাজারে সাধারণত অ্যাসটরিক-গ্র্যানুলা (সাদা) ও কার্ডিনাল (লাল) জাতের আলু দেখা যায়। সাদা ও লাল উভয় জাতের আলুর দামে বড় কোনো পার্থক্য নেই। কার্ডিনাল আলু ডায়মন্ড আলু নামেও পরিচিত। আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর বাজারে সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে আলুর দাম বাড়ছে। তা ছাড়া গত আড়াই মাস বাজারে একটু একটু করে বেড়েছে আলুর দাম। তাতে ঈদুল ফিতরের আগে হিমাগার থেকে যে আলু প্রতি কেজি ১০ টাকায় বাজারে এসেছিল, তা এখন ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বাজারে আসছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে আলুর বড় কোনো সংকট নেই। সরবরাহ যা আছে, তাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভালোভাবে চলবে। কিন্তু এরপরও বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কোন ব্যবসায়ী কীভাবে আলুর দাম বাড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছেন, তা অনেকের জানা। সরকার চাইলে এসব বিষয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’ সাধারণ ভোক্তার কথা চিন্তা করে আমদানিও করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আলু মাঠ থেকে ওঠার পর ব্যবসায়ীদের হাত ধরে তা বাজারে আসে। মাঝখানে একটা সময় থাকে হিমাগারে। বছরব্যাপী সংরক্ষণের এই সময়ে ব্যবসায়ীরাই মূলত এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। হিমাগারের মালিক অনেকে আলুর ব্যবসা করেন। কয়েক বছর ধরে দেশে আলুর ফলন ভালো। দেশে কমবেশি এক কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়। তাতে দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। তবে এবার আলুর দাম গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছরের এই সময়ে বাজারে আলুর কেজি ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা; যা এ বছর ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। সেই হিসাবে গত এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশের বেশি। আর টিসিবির দর অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৩ শতাংশের মতো।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, বগুড়া থেকে সব৴শেষ কেনা আলুর দাম পড়েছে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা ৪০ পয়সার মতো। এরপর পরিবহন ও শ্রমিকের খরচ আছে। তাতে ৪০ টাকার নিচে পাইকারিতে আলু বিক্রি করা যাচ্ছে না। মোকামে দাম বেশি থাকায় বাড়তি দরে আলু কিনতে হচ্ছে। তবে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের আলু ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঈদের আগে কেনা আলু প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। ঈদের পরে আলু কিনতে হচ্ছে বেশি দামে, তাতে বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

কাঁচা মরিচের দাম এখনো কমেনি
এদিকে ঈদের আগের অস্থির হওয়া কাঁচা মরিচের দাম এখনো নাগালের বাইরে। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকায়। মালিবাগ ও মগবাজারে সেই কাঁচা মরিচ খুচরায় বিক্রি হয়েছে ৩০০–৪০০ টাকা কেজি। আমদানি করা কাঁচা মরিচের সরবরাহ আরও বাড়লে দাম নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি কাঁচা মরিচের ব্যবসায়ী ওসমান গনি বলেন, কাঁচা মরিচের বাজার স্বাভাবিক হতে আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। কারণ, এই সময়ে আমাদের দেশে উৎপাদনের মৌসুম শেষ হয়। তাতে দাম বেড়ে যায়।

বাজারে অন্যান্য সবজির মধ্যে কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, পটোল ও ঢ্যাঁড়সের মতো অধিকাংশ সবজির দাম প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। তবে আলুর সঙ্গে বেগুনের দামও বাড়তি দেখা গেছে। মানভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। করলার দামও বেশি। প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার ওপরে।