কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের মাঝে গরুর (বকনা) বাছুর বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

গেলো (৯ মার্চ) ও (৩ মে) উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী ও ফিলিপনগর ৩ টি ইউনিয়নে প্রথম পর্যায়ে ১৭ জন ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮ জন জেলেদের মাঝে গরু বিতরণ করা হয়েছে।

দৌলতপুর মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইলিশের প্রজনন, বেড়ে ওঠা ও উৎপাদন বাড়াতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে ইলিশের অভয়াশ্রমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিলো। উপজেলায় নিবন্ধিত জেলেদের সংখ্যা ১ হাজার ৩শ’রও বেশি । এ সময়ে প্রতিটি জেলে পরিবারকে প্রণোদনা হিসেবে চাল দিয়ে থাকেন সরকার। কিন্তু জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় নিষেধাজ্ঞার সময়ও অভাবের কারণে নদীতে ইলিশ শিকারে নামেন তারা।

এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিকল্প কর্মসংস্থান হিসাবে মৎস্য বিভাগ জেলেদের মাঝে বিনামূল্যে গরুর (বকনা) বাছুর বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন। এ উদ্যোগের আওতায় দৌলতপুর উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৭ টি (গরু প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা মুল্যের) ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮টি গরু (প্রতিটি ২৮ হাজার টাকা মূল্যের) ২৫ জন জেলেকে একটি করে গরুর (বকনা) বাছুর দিয়েছেন উপজেলা মৎস্য বিভাগ।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, ২৫ জন জেলে খাতা কলমে গরুর (বকনা) বাছুর পেলেও বাস্তবে অনেকেই বরাদ্দকৃত গরুর (বকনা) বাছুর পাননি। একাধিক জেলে উপজেলা মৎস কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলছেন অনেকের বরাদ্দকৃত সরকারী তালিকায় নাম থাকলেও গরু পাননি, আবার একই ব্যাক্তির নামে দুটি গরু বরাদ্দ হয়েছে। জেলেরা আরো বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হওয়ার কারনে জেলে না হয়েও গরু পেয়েছেন অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিলিপনগর ইউনিয়নের একাধিক জেলে বলেন, আমরা সারা বছর মাছ ধরে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করি, খেয়ে না খেয়ে কোন রকম বেচে থাকি, কিন্তু সরকার আমাদের যে টুকু সহযোগীতা করছেন সে টুকুও আমরা পাচ্ছি না, ভাগ করে খেয়ে ফেলছেন মৎস অফিসার, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তার লোক জন। ফিলিপনগর ইউনিয়নের বৈরাগীর চরের জেলে মোঃ মজিদ প্রামানিক, মোঃ ইদ্রিস আলী, মোঃ শামরুল সরদার খাতা কলমে গরুর বকনা বাছুর পেলেও বাস্তবে তারা কেউ গরু পাননি।

ফিলিপনগর ইউনিয়নের বৈরাগীর চরের মোঃ মহন সর্দার, মোঃ ইয়াছিন আলী, মোঃ জয়নুল মন্ডল জেলে না হয়েও চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে গরু পেয়েছেন। আবার বৈরাগীর চরের জেলে মোঃ সাকুব মন্ডল এর নাম তালিকায় দুই যায়গায় আছে।

এমন অনিয়মে জেলেদের নেতা খোভ প্রকাশ করে বলেন, এর আগে সরকারী কোন অনুদান এলে মৎস অফিস থেকে আমাকে ডেকে খোঁজ খবর নিয়ে অনুদান দেওয়া হতো কিন্তু এবার আমাকে ডাকা হয়নি গরু দেয়ার তালিকায় আমার নামও নেই ।

এ বিষয়ে ফিলিপনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মইনুদ্দিন সেন্টুর সাথের কথা হলে তিনি বলেন, জেলেদের অনুদানের বিষয়টি মৌখীক ভাবে যানানো হলেও জেলেদের গরু দেয়ার বিষয়ে আমাকে যানানো হয়নি, ইউনিয়ন পর্যয়ে জেলেদের কোন নামের তালিকাও আমি দেয়নি। অনিয়মের বিষয়ে যানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, মৎস অফিসার মিথ্যা কথা বলছেন, তিনি আরও বলেন মৎস অফিসার টাকা খেয়ে এমন অনিয়ম করেছেন।

দৌলতপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হুসাইন মোহাম্মদ স্বপন এ বিষয়ে বলেন, চেয়াম্যানদের যানানো হলে তারা তাদের স্বাক্ষরীত ইউনিয়নের জেলেদের নামের যে লিস্ট দিয়েছে, এন.আই.ডি ধরে যাচাই বাছাই করে তাদেরকেই গরুর (বকনা) বাছুর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যাদের এন.আই.ডি-র সমস্যা আছে তাদেরকে গরু দেয়া হয়নি। অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারী অনুদানের গরু জেলেদের মাঝে বিতরণে কোন অনিয়ম হয়নি। আমরা যাচাই বাছাই করে দুই বারে ২৫ জন জেলেদের মাঝে গরুর (বকনা) বাছুর দিয়েছি। চেয়ারম্যান আমার উপর যে অভিযোগ এনেছেন সেটি সম্পুর্ন মিথ্যা।

বার্তাবাজার/রাহা